প্রখ্যাত সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে চিত্র তারকা, সাংবাদিক, আমজনতা - ৮৪ বছরের এই মানবাধিকার কর্মীর মৃত্যুতে ট্যুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন বহু মানুষ। অবশ্য বেশিরভাগ ট্যুইটেই শোকের তুলনায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে বেশি করে।
মাওবাদীদের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বছর ৮ অক্টোবর রাঁচীতে তাঁর বাড়ি থেকে স্ট্যান স্বামীকে গ্রেফতার করে এনআইএ। কঠোর UAPA আইনের অধীনে মামলা রুজু হয় তাঁর বিরুদ্ধে। নভি মুম্বাইয়ের তালোজা জেলে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। শ্রবণশক্তিও হারিয়েছিলেন অশীতিপর এই বৃদ্ধ। জেলের মধ্যে কোনো চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না অভিযোগ করে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে একাধিকবার জামিনের আবেদন করেন তিনি, প্রতিবারই তা খারিজ করে দেয় আদালত। এমনকি একটি স্ট্র-এর জন্যও একাধিকবার আদালতে আবেদন করতে হয়েছে তাঁকে। শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হওয়ায় গত ২৮ মে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্যান স্বামীকে ভর্তি করার নির্দেশ দেয় বোম্বে হাইকোর্ট। সেখানেই আজ দুপুর দেড়টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি লেখেন, "ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ। একজন সমাজকর্মী যিনি নিরলসভাবে প্রান্তিক মানুষদের সাহায্য করেছিলেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে কঠোর UAPA আইনে তাঁকে জেলবন্দী করে অমানবিক আচরণ করেছেন তাঁর সাথে, অথচ কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। হেফাজতের এই হত্যার অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে।"
ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, "স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে গভীরভাবে দুঃখিত। আমাদের সিস্টেম এতো নিষ্ঠুর ও অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। গরীবদের জন্য উনি যা করেছেন, আমি মনে করি না তারপর এগুলো প্রাপ্য ছিল ওনার।"
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ট্যুইটারে লেখেন, "ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে আন্তরিক সমবেদনা। ন্যায়বিচার ও আন্তরিকতা প্রাপ্য ওনার।"
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, "ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর বিষয়ে জেনে দুঃখ পেয়েছি। একজন মানবিক ব্যক্তির সাথে আমাদের সরকার মানবিক আচরণ করতে পারলো না। একজন ভারতীয় হিসেবে এই ঘটনায় গভীরভাবে দুঃখ পেয়েছি।"
ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ট্যুইটারে লিখেছেন, "স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর কথা জেনে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি.. তাঁর গ্রেপ্তার এবং জেলবন্দির তীব্র বিরোধিতা করেছি আমি। এই চরম অমানবিকতা এবং সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়া, যা তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, এর উত্তর দিতেই হবে কেন্দ্র সরকারকে।"
সাংবাদিক রানা আয়ুব এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, "ফাদার স্ট্যান স্বামী, দেশ হিসেবে আমরাই আপনাকে হত্যা করেছি। লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। শান্তিতে থাকুন ফাদার, হিরো, মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন।"
অভিনেত্রী দিয়া মির্জা ট্যুইটারে লিখেছেন, "অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনা।"
এছাড়াও একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন