২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের আটটি জাতীয় দলের ঘোষিত মোট সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮,৮২৯.১৫৮ কোটি টাকায়। যার মধ্যে সর্বাধিক সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র। ঘোষিত আর্থিক বছরে বিজেপির পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুসারে তাদের সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৬,০৪৬.৮১ কোটি টাকা। সোমবার অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে ২০২০-২১ অর্থবছরে আটটি জাতীয় দলের ঘোষিত মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭,২৯৭.৬১ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৮,৮২৯.১৫ কোটি টাকা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পদে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। "তৃণমূল কংগ্রেসের মোট সম্পদ ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৮২.০০১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৫৮.১০ কোটি টাকা হয়েছে। এই বৃদ্ধির হার ১৫১.৭০ শতাংশ।"
এডিআর-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে, বিজেপির ঘোষিত সম্পদ ছিল ৪,৯৯০.১৯ কোটি টাকা ছিল, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১.১৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬,০৪৬.৮১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে, কংগ্রেসের ঘোষিত সম্পদ ছিল ৬৯১.১১ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ১৬.৫৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮০৫.৬৮ কোটি টাকা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) একমাত্র জাতীয় দল, যাদের বার্ষিক ঘোষিত সম্পদ কমেছে বলে জানানো হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২০-২১ থেকে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের মধ্যে BSP-র মোট সম্পদ ৭৩২.৭৯ কোটি টাকা থেকে ৫.৭৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৬৯০.৭১ কোটি টাকা।"
সর্বশেষ প্রতিবেদনে আটটি জাতীয় দল - বিজেপি, কংগ্রেস, এনসিপি, বিএসপি, সিপিআই, সিপিআই(এম), এআইটিসি এবং এনপিপি-র ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত সম্পদ এবং দেনার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সম্পদও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০.৯৩ কোটি টাকার তুলনায় বেড়ে ৭৪.৫৪ কোটি টাকা হয়েছে। যেখানে সিপিআই-এর সম্পদ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪.০৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছে ১৫.৭২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, "সিপিআই-এম-এর মোট সম্পদ ২০২০-২১ সালে ছিল ৬৫৪.৭৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৭৩৫.৭৭ কোটি টাকা।”
প্রতিবেদনে আটটি জাতীয় দলের দেনারও বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে আটটি জাতীয় দলের ঘোষিত আর্থিক মোট দায় ছিল ১০৩.৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কংগ্রেসের দায় ছিল সর্বোচ্চ বা ৭১.৫৮ কোটি টাকা। এই তালিকায় এর পরেই আছে CPI(M)। যাদের দায় ১৬.১০৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কংগ্রেসের দায় কমে হয়েছে ৪১.৯৫ কোটি টাকা, সিপিআইএম-এর ১২.২১ কোটি টাকা এবং বিজেপির ৫.১৭ কোটি টাকা।
এই প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে যে দুই দলের সম্পদ সবথেকে কম সেই দুল দল হল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এবং সিপিআই। এই দুই দলের সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ১.৮২ কোটি টাকা এবং ১৫.৬৭ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে জাতীয় দলগুলি ICAI নির্দেশিকা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই নির্দেশ অনুসারে দলগুলিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক বা সংস্থাগুলির বিবরণ ঘোষণা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল সমস্ত রাজনৈতিক দলকে দান হিসাবে প্রাপ্ত স্থায়ী সম্পদের বিবরণ যেমন সম্পদের মূল মূল্য, কোন সংযোজন, অবমূল্যায়ন, নির্মাণের ব্যয় ইত্যাদি ঘোষণা করা উচিত। একই সাথে স্থায়ী সম্পদেরও ঘোষণা করা উচিত। যদিও জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো এই সময় যা যা সম্পদ কিনেছে তা সব দল ঘোষণা করেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নগদ এবং অন্যান্য ঋণের বিবরণ নির্দিষ্ট করা উচিত এবং যদি এটি মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি হয়, তবে এই ধরনের ঋণের প্রকৃতি এবং পরিমাণ সেই সেই রাজনৈতিক দলের বিশেষভাবে ঘোষণা করা উচিত। যদিও সব জাতীয় দল সেই ঘোষণা করেনি।
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলির অডিট সংক্রান্ত ICAI নির্দেশিকাগুলি, যা রাজনৈতিক দলগুলির আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য নির্বাচন কমিশনও সমর্থন করেছিল তা শুধুমাত্র নির্দেশিকা স্তরেই রয়ে গেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলি সক্রিয়ভাবে তাদের আয়ের বিবরণ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ বাধ্যতামূলক হিসাবে গ্রহণ করেনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন