হাতে আর মাত্র ১০ দিন। তার পরেই শুরু হচ্ছে লোকসভার ভোট। আগামী ১৯ এপ্রিল দেশের ২১ রাজ্য আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০১ আসনে প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হবে। যে ভোটে খুন, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ-সহ নানা গুরুতর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত প্রার্থীরাও আইনপ্রণেতা হওয়ার লড়াইয়ে নামছেন। এডিআর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে তথাকথিত দাগিদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে অবশ্য বাকি দলগুলিকে টেক্কা দিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি।
পদ্ম শিবিরের ২৮ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে মারাত্মক অভিযোগ। প্রথম দফার ভোটে লড়াইয়ের ময়দানে নামা প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সোমবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR)।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম দফার ভোটে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন ১,৬২৫ প্রার্থী। তার মধ্যে ১,৬১৮ প্রার্থীর হলফনামা খতিয়ে দেখা হয়েছে। যার মধ্যে ২৫২ জন বা ১৬ শতাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ওই ২৫২ জনের মধ্যে আবার ১৬১ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় (খুন, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ) মামলা রয়েছে।
এছাড়া, ৭ জনের বিরুদ্ধে খুনের (৩০২ ধারা), ১৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা (৩০৭ ধারা) এবং ১৮ জনের বিরুদ্ধে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মতো মামলা রয়েছে। একজনের বিরুদ্ধে আবার ধর্ষণের (আইপিসি ৩৭৬) মামলা রয়েছে।
দাগিদের মধ্যে ১৫ জন নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ৩৫ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হেট স্পীচ বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে মামলা রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগতভাবে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা ফৌজদারি মামলা
এডিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি-র ৭৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৮ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এমনকি, তাদের মধ্যে আবার ১৪ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর ফৌজদারি মামলা।
বিজেপির পরে রয়েছে কংগ্রেস। মল্লিকার্জুন খাড়গের দলের ৫৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৯ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। গুরুতর ধারায় মামলা চলছে ৮ জনের বিরুদ্ধে।
তামিলনাডুর দুই প্রধান দল ডিএমকে (DMK) এবং এআইএডিএমকে (AIDMK)। এদের মধ্যে ডিএমকে’র ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন এবং এআইডিএমকে'র ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জনেরও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ফৌজদারি মামলার সংখ্যার বিচারে দুই দলই একই সারিতে রয়েছে।
লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-র ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা।
মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজবাদী পার্টি (BSP)-র ৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধেও চলছে ফৌজদারি মামলা। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (SP)-র ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)-এর ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের বিরুদ্ধেও চলছে ফৌজদারি মামলা।
কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা
১৬১৮ জন প্রার্থীদের মধ্যে ৪৫০ জন (২৮%) কোটিপতি।
দলগতভাবে কোটিপতি প্রার্থী
বিজেপি'র ৭৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৯ জন কোটিপতি। জাতীয় কংগ্রেসের ৫৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৯ জন কোটিপতি। এআইডিএমকে'র ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৫ জন, ডিএমকে'র ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জন, এবং, বিএসপি'র ৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জন প্রার্থী কোটিপতি।
এছাড়া, তৃণমূল কংগ্রেসের ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন, আরজেডি'র ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই কোটিপতি। ওই প্রতিবেদনে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (ADR) জানিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় প্রত্যেক প্রার্থীর গড় সম্পদের পরিমাণ ৪.৫১ কোটি টাকা।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
৬৩৯ জন (৩৯%) প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী। ৮৩৬ জন (৫২%) প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা তার বেশী। ৭৭ জন প্রার্থীর ডিপ্লোমা আছে। ৩৬ জন প্রার্থী ঘোষণা করেছেন যে তারা শুধুমাত্র স্বাক্ষর। ৪ জন প্রার্থী তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয় উল্লেখ করেন নি।
প্রার্থীদের বয়সের বিবরণ
৫০৫ জন (৩১%) প্রার্থীর বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৮৪৯ জন (৫২%) প্রার্থীর বয়স ৪১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ২৬০ জন (১৬%) প্রার্থীর বয়স ৬১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে এবং ৪ জন প্রার্থীর বয়স ৮০ বছরের উর্ধে।
প্রার্থীদের মধ্যে কতজন মহিলা?
সাতদফা লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ১৩৫ জন (৮%) মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন