রাজ্যসভা নির্বাচনে এক ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা’কে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরেই। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিজেপি ঘনিষ্ঠ এবং বিজেপি নেতা অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দলেই একাধিক যোগ্য ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও একসময় বাঙলা ভাগের ডাক দেওয়া অনন্ত মহারাজকে মনোনয়ন কেন দেওয়া হল তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে।
দিনহাটার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ১২ জুলাই রাত ৮টায় “উত্তরবঙ্গ আর কতটা ঠকবে?” শীর্ষক এক ফেসবুক লাইভে বলেন, যে অনন্ত মহারাজের নাম বলা হচ্ছে তাঁর নাম সম্ভবত নগেন রায়।…একজন মানুষের দু’টো নাম কীভাবে থাকে? কীভাবে দু’টো পরিচয় থাকে?” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “তিনি কি এই শহরের নাগরিক?” “নারায়ণী সেনার কী হল আমরা কেউ জানিনা?” “উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার কী হল আমরা কেউ জানিনা।” “কোচবিহারের মানুষকে বার বার ঠকানো হচ্ছে। এখানকার মানুষের অনুভূতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।”
১৩ জুলাই “অমৃত কালে বিষ পান” শীর্ষক অন্য এক ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “মনোনয়ন জমা দেবার পর আমি নিশ্চিত হয়েছি যে তিনি নগেন্দ্র রায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিষপান করছি। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে আমরা বিজেপির পক্ষ থেকে এমন একজনকে সংসদের উচ্চকক্ষে মনোনয়ন দিচ্ছি যিনি মুখ দিয়ে বিজেপি শব্দটা উচ্চারণ করলেন না। অথচ তাঁকে বিজেপির লোকেরাই নির্বাচিত করবেন।”
রাজ্য বিজেপির একাধিক যোগ্য নেতা থাকতেও তাঁদের নাম বিবেচনা না করে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর অনন্ত মহারাজকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দরেই। প্রকাশ্যে কেউ এই বিষয়ে মুখ না খুললেও অনেকেই ক্ষোভ গোপন করছেন না।
যদিও বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলীয় নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্তের মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কোনও কোনও মহলের মতে আরএসএস-এর পক্ষ থেকে শমীক ভট্টাচার্য-র নাম প্রস্তাব করা হলেও সেই প্রস্তাবকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজবংশী নেতা অনন্ত মহারাজকেই রাজ্যসভার ভোটে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনোনয়ন দিয়েছেন।
সূত্র অনুসারে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সুপারিশেই অনন্ত মহারাজ মনোনয়ন পেয়েছেন। আর এসএস-এর পক্ষ থেকে বিজেপির তিন বর্ষীয়ান নেতা শমীক ভট্টাচার্য, রথীন্দ্র বসু এবং রাহুল সিনহার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেখানে আলোচনাতেই ছিল না অনন্ত মহারাজের নাম।
কোচবিহারের অনন্ত মহারাজ নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেটার কোচবিহারের মহারাজা বলে দাবি করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তিনি বেশ কয়েক বছর আগে আসামে চলে গেছিলেন। ২০১৯ নির্বাচনের আগে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেন। আবার ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এক মঞ্চে দেখা গেছিল।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ চিলা রায়ের ৫১২তম জন্মজয়ন্তীতে এক মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও অনন্ত মহারাজ। ওইদিনই নারায়ণী সেনাদের তিনি সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দেবার আহ্বান জানান। এরপর একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে অনন্ত মহারাজের। ওই বছরেই ভাইফোঁটার দিন অনন্ত মহারাজকে উপহার পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে বিজয়া সম্মিলনীতেও একই মঞ্চে তৃণমূল সুপ্রিমো ও অনন্ত মহারাজকে দেখাগিয়েছিল।
যদিও নভেম্বর মাসের ৫ তারিখ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক করেন অনন্ত মহারাজ। ওই বৈঠকের পর রাজ্যভাগের জল্পনা উস্কে দিয়ে জিসিপিএ (গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন) নেতা অনন্ত মহারাজ বলেন, আলাদা রাজ্য এখন সময়ের অপেক্ষা। বৈঠক শেষে অনন্ত মহারাজ দাবি করেন, আমার বিশ্বাস খুব শীঘ্রই আলাদা রাজ্য হবে। ১০০% হবেই। শুধু সময়টা আমি বলতে পারব না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন