শনিবার (২৫শে জুন) জার্মান ডায়েরি লেখিকা অ্যানে ফ্রাঙ্কে'র ‘দ্য ডায়েরি অফ এ ইয়ং গার্ল’ প্রকাশের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে গুগল। ডায়েরিটিতে অ্যানে’র জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তগুলির ডুডল এঁকে একটি ভিডিও’র মাধ্যমে উপস্থাপন করেছে গুগল। যা আজ সারাদিন গুগলের পাতায় দেখা যাবে। ইতিপূর্বে চলতি মাসের ১২ই জুন, তরুণ ডায়েরি লেখিকা অ্যানে ফ্রাঙ্কের জন্মদিনেও ডুডলটি দেখানো হয়েছিল গুগলের পাতায়।
ডুডল আর্টের মাধ্যমে এই জার্মান তরুণীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাল গুগল। বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গুগল এই বিশেষ পন্থা অবলম্বন করে থাকে। ১৯৪৫ সালে ইহুদি হলোকাস্টের শিকার হন অ্যানে। ‘গুগল ডুডল’-এর আর্ট ডিরেক্টর থওকা মায়ের এই ডুডলটি তৈরি করেছেন। তাঁকে অ্যানে’র জীবন ও হলোকাস্টের স্মৃতির বর্ণনা করেছেন একজন জার্মান চিত্রকর।
অ্যানে ফ্রাঙ্ক, ১২ই জুন, ১৯২৯ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। হিটলারের নাৎসি পার্টি জার্মানিতে ক্ষমতাসীন হবার পর অ্যানের বাবা, ওটো ফ্রাঙ্ক ও মা, এডিথ ফ্রাঙ্কের সাথে শহর ছাড়েন অ্যানে। ফ্রাঙ্ক পরিবারকে ১৯৪২ সালে নেদারল্যান্ড-এর আমস্টারডাম-এ চলে আসতে হয়। ওই বছরই জুলাই মাসে ইহুদীদের নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ায়, ফ্রাঙ্ক পরিবারকে একটি অফিস বিল্ডিং-এ আশ্রয় নিতে হয়। তাঁরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে এসে ওটো যে বিল্ডিংয়ে কাজ করতেন সেখানে আশ্রয় নেন। সেখানে খুব কষ্টে দিন কাটছিল তাঁদের।
ওই সময়ে কি অবস্থায় তাঁদের দিন কাটছিল তার জলজ্যান্ত দলিল ছিল ১৫ বছরের অ্যানে'র ডায়েরি। বইয়ের আলমারির পিছনে লুকিয়ে সর্বদা ভয়ে ভয়ে দিন কাটত তাঁদের। অ্যানের ডায়েরিতে এই লুকিয়ে থাকার কক্ষটি 'অ্যানেক্স' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৪৪ সালের ৪ই আগস্ট, গেস্টাপো (নাৎসি গোপন পুলিশ) দ্বারা গ্রেপ্তার হয় ফ্রাঙ্ক পরিবার। অ্যানে জন্মদিনে উপহার হিসাবে একটি ডায়েরি পেয়েছিলেন, সেখানেই তিনি নিজের, পরিবারের ও তৎকালীন সময়ের কথা লিখেছিলেন। ১৯৪৫ সালে বিদায় নেন মাত্র ১৫ বছরের অ্যানে।
পিতা ওটো ফ্রাঙ্ক, কুখ্যাত হলোকাস্টে ১৫ বছরের মেয়ে অ্যানে সহ পরিবারের সকলকে হারিয়ে ছিলেন। তিনিই ছিলেন ওই পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য। পরিস্থিতি একটু সাধারণ হলে ওটো আমস্টারডামে ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন তাঁর সেক্রেটারি ম্যিপ গ্যিস, ছোট্ট অ্যানেকে রক্ষা করতে না পারলেও, অ্যানে’র ডায়েরিটি সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। ম্যিপ গ্যিস নিজে একজন লেখক হওয়ায় তিনি ওই ডায়েরির তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ১৯৪৭ সালে উক্ত ডায়েরিটি প্রকাশ করার মাধ্যমে অ্যানে ফ্রাঙ্কের জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অ্যানে এই ডায়েরিটি ডাচ ভাষায় লিখেছিলেন। ডায়েরিটি কিশোরী বয়সে তাঁর জীবনের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পূর্ণ। তরুণ বয়সে কিশোর-কিশোরীদের যে সমস্ত রুটিনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেগুলি স্পষ্টভাবে ডায়েরিতে বর্ণনা করেছিলেন অ্যানে। পরবর্তীতে, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যাবার পর, নাৎসি পার্টির অধীনে অ্যানে ও তাঁর পরিবারের জীবন কেমন ছিল তা বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠেছে অ্যানে’র এই ডায়েরিটি।
লেখিকা ম্যিপ গ্যিস নিজ দায়িত্বে ‘অ্যানে’র ডায়েরি’-টি ডাচ থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেন। ১৯৫২ সালে ‘দ্য ডায়েরি অফ এ ইয়ং গার্ল’ নামে এই বইটি প্রকাশ পায়। পরে বইটি ৭০টি আলাদা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। উল্লেখ্য, এই বইটি বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে, পেয়েছে ‘বেস্টসেলার’ –এর শিরোপা। অ্যানে’র বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ কয়েকটি নাটক এবং চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন