আসামে মানব অঙ্গ ব্যবসা চক্রের সিবিআই ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুললো এপিসিসি (All India Assam Congress Committee)। তাদের দাবি, রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট ব্যক্তি এই কান্ডের সাথে জড়িত। অপরদিকে এই কান্ডে কলকাতার একটি বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালের নাম ওঠায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টির তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি রিপুণ বোরার নেতৃত্বে APCC-র একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে রাজ্যপাল প্রফেসর জগদীশ মুখীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রাজ্যপালকে দেওয়া APCC-র স্মারকলিপিতে লেখা ছিল, আসামবাসীর মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষা এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চাইছে APCC। রাজ্যে চলমান মানব অঙ্গের ব্যবসা চক্রের সিবিআই এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিক রাজ্যপাল।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আসামে গত পাঁচ বছর ধরেই অত্যন্ত সক্রিয় ছিল মানব অঙ্গ ব্যবসা চক্র। সম্প্রতি মরিগাঁও জেলার ধরমতুলে এই চক্রের বিষয়ে জানা যায়। অঙ্গের দালাল এই মুহূর্তে জেল হেফাজতে থাকা বিজেপি সক্রিয় সদস্য রমেন মেধি এবং লিলিমাই বোড়ো এই অপরাধের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে দেন। তাঁরা প্লাবন বরঠাকুর এবং রাজেশ পোদ্দার নামে দু'জনের নাম জানিয়েছেন, যাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কিডনি বিক্রির নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটির কাছে গণেশগুড়িতে একটি বিশাল বড় অফিস আছে প্লাবন বরঠাকুরের। হাইসিকিউরিটি জোনের মধ্যে থেকে কিভাবে এইধরনের ফৌজদারি র্যাকেট চালানো সম্ভব, তা প্রশ্নের বিষয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর বিষয়।"
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, জাগিরোয়াড কেন্দ্রে এই কিডনি বিক্রয় চক্রের হদিস পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে ১৪০ জনেরও বেশি লোকের কাছ থেকে অবৈধভাবে কিডনি নিয়েছে দালালরা। কলকাতায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের কিডনি নেওয়া হয়েছে। কিডনি দেওয়ার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে এখনও কয়েকটি পরিবার কলকাতায় রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতি কিডনি পিছু ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দালালরা কিন্তু কিডনি দেওয়ার পর এর থেকে অনেক কম টাকা দিয়ে দাতাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। রাজ্যের জেলায় জেলায় এই ধরনের দালালরা ছড়িয়ে আছেন। এই ঘটনা মানুষের দারিদ্র্যের করুণ ছবি প্রকাশ্যে এনেছে, যেখানে মানুষ টাকার জন্য কিডনি বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন।
APCC-র স্মারকলিপিতে লেখা কথাগুলো পুলিশের কাছে জেরায় স্বীকার করেছেন গ্রেফতার হওয়া লিলিমাই বোড়ো। সিবিআই ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি এই র্যাকেটের স্বীকার হওয়া ব্যক্তিদের সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তুলেছে APCC। নগাঁও ও ডিব্রুগড় জেলার পুলিশ বর্তমানে এই ঘটনার তদন্ত করছেন। এই ঘটনায় অন্য দুই সন্দেহভাজন প্লাবন বরঠাকুর এবং রাজেশ পোদ্দারও বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে এবং দু'জনই এখন পলাতক।
অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ লিখেছেন, আসামের বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা গেছে রাজ্যের বহু মানুষ মানব অঙ্গ পাচার চক্রের শিকার হয়েছেন। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে দরিদ্র গ্রামবাসীদের এই চক্রের টার্গেট বানানো হয়েছে। কলকাতার সাথে এই চক্রের একটি যোগসূত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সমস্ত কার্যক্রম কলকাতার Rabindranath Tagore International Institute of Cardiac Sciences হাসপাতালে হয়েছে।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, মহামারী মানুষকে আরো দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এই জাতীয় জঘন্য দৃষ্টান্তের পথ প্রশস্ত করছে। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এই মিডিয়া রিপোর্টগুলো যাচাই করতে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিন।
তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন