২০২২ সালে গোটা ভারতে মোট ১৯৪ জন সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করা হয়েছে যার মধ্যে ৭ জন মহিলা সাংবাদিকও রয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৮ জন। মঙ্গলবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার’-এ এই নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপ (আরআরএজি) নামক এক সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় এজেন্সি, রাজনৈতিক নেতা, কুখ্যাত অপরাধী ও সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীদের দ্বারা এই সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। কখনও এফআইআর দায়ের, কখনও পুলিশ দিয়ে সমন পাঠিয়ে, কখনও দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশনে আটক করে, কখনও গ্রেফতার করে, আবার কখনও সরাসরি শারীরিক হামলা করে বা প্রাণঘাতী হামলার হুমকি দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভারতের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে সর্বাধিক (৪৮ জন) সাংবাদিককে আক্রমণ করা হয়েছে। এই তালিকায় তারপরেই রয়েছে তেলেঙ্গানা, যেখানে মোট ৪০ জন সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে ওড়িশা (১৪), উত্তরপ্রদেশ (১৩), দিল্লি (১২), পশ্চিমবঙ্গ (১১), মধ্যপ্রদেশ ও মণিপুর (৬), আসাম ও মহারাষ্ট্র (৫), বিহার-কর্ণাটক-পাঞ্জাব (৪), ঝাড়খণ্ড-ছত্তিসগড়-মেঘালয় (৩), অরুণাচল প্রদেশ ও তামিলনাড়ু (২) এবং অন্ধ্রপ্রদেশ-গুজরাট-হরিয়ানা-পুদুচেরি-রাজস্থান-ত্রিপুরা ও উত্তরাখণ্ডে ১ জন করে সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। আরআরএজি-এর মতে ১৯৪ জনের মধ্যে মোট ১০৩ জন সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও আধিকাররিকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন অ-রাষ্ট্রীয় কুখ্যাত অপরাধী ও রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা।
প্রথম ক্ষেত্রের ১০৩ জন সাংবাদিকদের মধ্যে ৭০ জনকে গ্রেফতার করা বা আটক করা হয়েছে। এছাড়াও ১৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, ৪ জনকে পুলিশ ও ইডি তরফে সমন পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৫ জনকে পুলিশ ও জন আধিকারিকদের শারীরিক আক্রমণ, প্রাণঘাতী হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। যে চারজনকে সমন পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের গৌহর গিলানি ও যশ রাজ শর্মা এবং মণিপুরের ওয়াংখেমচা শামজাই-কে সমন পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে, ১৯৯২ সালের হর্ষদ মেহতার স্টক মার্কেট স্ক্যাম ফাঁস করা বর্ষীয়ান পদ্মশ্রী জয়ী সাংবাদিক সুচেতা দালালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।
এই বিষয়ে আরআরএজি-এর ডিরেক্টর সুহাস চাকমা জানিয়েছেন, “তেলেঙ্গানায় সবচেয়ে বেশি মোট ৪০ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার অথবা আটক করে রাখা হয়েছিল। তারপরেই উত্তরপ্রদেশে ৬ জন, জম্মু ও কাশ্মীরে ৪ জন, মধ্যপ্রদেশে ৩ জন, আসাম, ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, মণিপুর ও ওড়িশায় ২ জন করে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে ১ জন করে সাংবাদিককে গ্রেফতার বা আটক করে রাখা হয়েছিল। ১৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ, ২৯৫এ, ১৫৩এ নং ধারায়; তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৬৬সি, ৬৭, ৬৯ নং ধারায় এবং তফসিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের আওতায়।”
অন্যদিকে, যে ৯১ জন সাংবাদিক অ-রাষ্ট্রীয় কুখ্যাত অপরাধী ও রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। অ-রাষ্ট্রীয় অপরাধী ও রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার নিরিখে সবার শীর্ষে রয়েছে ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন