আগামী ১২ এপ্রিল নির্ধারিত ভোটগ্রহণের আগে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই নির্বাচনে শাসকদলের গায়ক-রাজনীতিবিদ প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তা হল তার অতীত। পরপর দু’বার আসানসোল থেকে লোকসভা সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দলবদল করে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। এমনকি ২০২১ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে পাশের টালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং আসানসোল লোকসভা সাংসদ হিসাবেও পদত্যাগ করেন। এর পরেই তৃণমূল তাকে বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থী করেছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রাক্তন দলীয় বিধায়ক এবং রাজ্য পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির আকস্মিক মৃত্যুর কারণে ভোট হচ্ছে বালিগঞ্জে।
বালিগঞ্জের উপনির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময়, বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ অথবা সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম, দু’জনেই সুপ্রিয়র দলবদলের কথা তুলে ধরছেন। অন্যদিকে তাদের সাথে সুপ্রিয়র অতীত সম্পর্ক তুলে ধরতে বিজেপি অন্য কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রায় সমস্ত প্রচার সমাবেশে, বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিয় দ্বারা রচিত এবং গাওয়া গান "এই তৃণমূল আর না" বারবার বাজাচ্ছেন। এটি বালিগঞ্জের ভোটারদের সুপ্রিয়র দশ বছর ধরে বিজেপির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
আইএএনএস-এর সাথে কথা বলার সময়, কেয়া ঘোষ বলেন, গানটি সুপ্রিয়র সুর করা এবং গাওয়া হলেও এটি এখন বিজেপির সম্পত্তি। "রাজনৈতিক শিবির বদলের অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিয় যেভাবে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর চেয়ার থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে দলবদল করেছেন তা সত্যিই ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
সিপিআই-এমও, প্রচার সভাগুলিতে, বিজেপির লোকসভার সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে সুপ্রিয়র বেশ কয়েকটি পুরানো বিবৃতি এবং কাজের কথা তুলে ধরছে।
যদিও সুপ্রিয়র নিজস্ব যুক্তি আছে। তাঁর মতে, তাঁর ঘটনা প্রথম নয় যেখানে কোনও ব্যক্তি তাঁর রাজনৈতিক শিবির বদল করেছেন। বাবুল জানিয়েছেন,
"আমার সততার ভিত্তি ছিল যে আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরই বিজেপির লোকসভা সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। বিরোধীরা আমার পূর্বের তৃণমূল বিরোধী মন্তব্য বা CAA এবং NRC-এর প্রতি আমার সমর্থনকে তুলে ধরছে। তখন এটাই ছিল আমার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। বিজেপির একজন সাংসদ ছিলাম। বিরোধীরা যা বলার তাই বলুক। কিন্তু আমি শুধু জানি আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গতিশীল নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গৃহীত ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হতে।"
অন্যদিকে কিংবদন্তী বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাগ্নি সায়রা শাহ হালিম এবার বালিগঞ্জ থেকে সিপিআই-এম প্রার্থী। নাসিরুদ্দিন শাহ সম্প্রতি তাঁর ভাগ্নির জন্য জনসমর্থন চেয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন, যেখানে সরাসরি উল্লেখ না করেও তিনি সুপ্রিয়র বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাওয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
নাসিরুদিইন ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, "আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। আমি স্বতন্ত্রভাবে ভোট চাইছি। আপনি কি এমন কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন যিনি ঘন ঘন রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করেন নাকি জনগণের পাশে দাঁড়ান এমন কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন? তাই, বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে আমি সায়রা শাহ হালিমের পক্ষে সমর্থন চাইছি।”
শাহের ভিডিও বার্তা প্রকাশের কয়েক ঘন্টা পরে, বাবুল সুপ্রিয় একটি টুইট বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, সম্ভবত সিপিআই-এম-এর চাপের কারণে শাহ এই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন