সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেন সীতারাম ইয়েচুরি। এদিন এক ট্যুইট বার্তায় জেনারেল রাওয়াতের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ইয়েচুরি লেখেন – “ভয়ংকর খবর। গভীরভাবে শোকাহত। প্রয়াত জেনারেল রাওয়াত, তার স্ত্রী শ্রীমতি মধুলিকা রাওয়াত এবং দুর্ঘটনায় আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।” প্রসঙ্গত এদিনই এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন জেনারেল রাওয়াত সহ আরও ১৩ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও।
এদিন তামিলনাড়ুর সুলুর থেকে আকাশে উড়েছিলো সেনার এম আই-১৭, ভি-৫ হেলিকপ্টার। এই হেলিকপ্টারে সওয়ার ছিলেন সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত সহ ১৪ জন। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ নীলগিরির একটি চা বাগানের ওপর এই হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই তাতে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং ছাড়া সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় ক্যাপ্টেন বরুণ সিং তামিলনাড়ুর সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দীর্ঘ ৪৩ বছর সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকার পর, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে (৬৩) ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে আধুনিক এবং উত্তর বা পশ্চিম সীমান্তে যে কোনও আকস্মিক সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷
বুধবার তামিলনাড়ুর নীলগিরি পাহাড়ে একটি মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী এবং হেলিকপ্টারটিতে থাকা আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেনারেল রাওয়াত ১ জানুয়ারী, ২০২০ ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী - তিনটি পরিষেবাকে একত্রিত করার জন্য এই পদ তৈরি করা হয়েছিল৷ সিডিএস হিসাবে, জেনারেল রাওয়াত সমস্তরকমের সেনা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রধান সামরিক উপদেষ্টাও ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সদ্য সৃষ্ট সামরিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান হিসেবেও নিযুক্ত হন।
১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬-তে, সরকার তাকে সেনাবাহিনীর ২৭ তম প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে। জেনারেল দলবীর সিং সুহাগের অবসর নেওয়ার পর তিনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬তে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তিনি সরকারকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী একটি দল হিসাবে কাজ করবে এবং সিডিএস তিনটি বাহিনীর মধ্যে একীকরণ নিশ্চিত করবে।
বরাদ্দকৃত বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে, যৌথ পরিকল্পনা এবং একীকরণের মাধ্যমে পরিষেবার সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ এবং পরিচালনায় আরও সমন্বয় সাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
জেনারেল রাওয়াত যখন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনটি পরিষেবার মধ্যে আরও সমন্বয় তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সিডিএস পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি তিন বছর ভারতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমী, ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থের কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কোর্সেও অংশ নেন।
সেনাবাহিনীতে তাঁর কর্মজীবনে, জেনারেল রাওয়াত পূর্ব সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি রাষ্ট্রীয় রাইফেলস সেক্টর, কাশ্মীর উপত্যকায় একটি পদাতিক বিভাগ এবং উত্তর-পূর্বে একটি কর্পস কমান্ড করেছিলেন। এছাড়াও জেনারেল রাওয়াত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে শান্তিসেনার এক ব্রিগেডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
একজন সেনা কমান্ডার হিসাবে, তিনি পশ্চিম ফ্রন্ট বরাবর একটি থিয়েটার অফ অপারেশন কমান্ড করেন এবং সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের আগে সেনাবাহিনীর ভাইস চিফ নিযুক্ত হন। সেনাবাহিনীতে ৪৩ বছরের ব্যবধানে, জেনারেল রাওয়াত বেশ কয়েকটি বীরত্ব এবং বিশিষ্ট পরিষেবা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন