জম্মু ও কাশ্মীরে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে ২০১৪ নির্বাচনের পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। ২০১৮ সালে এই জোট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় বিজেপি।
২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ৮৭ বিধায়কের তৎকালীন বিধানসভায় পিডিপির ২৮ এবং বিজেপির ২৫টি আসন ছিল। ন্যাশনাল কনফারেন্স জয়ী হয় ১৫ আসনে। সেবার তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ১০ লক্ষ ৯২ হাজার ২০৩, ১১ লক্ষ ৭ হাজার ১৯৪ এবং ১০ লক্ষ ৬৯৩।
২০১৪ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার বিজেপির সমস্ত আসন এসেছিল জম্মু বিভাগ থেকে। পিডিপি মূলত উপত্যকা অঞ্চল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছিল।
২০১৮ সালে সরকারের পতনের পর রাজ্যপালের শাসনে যায় জম্মু ও কাশ্মীর। ৫ আগস্ট, ২০১৯-এ রাজ্যটিকে জম্মু ও লাদাখ - দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়। একই দিনে এই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়।
তখন থেকেই, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত একটি অঞ্চল এবং এখানে প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে দায়িত্বে আছেন একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় বিজেপি এখনও খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। উপত্যকায় প্রধান জনসমর্থন এখনও আঞ্চলিক ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং পিডিপি-র দিকেই ঝুঁকে আছে কিনা তার একমাত্র প্রমাণ পাওয়া যাবে বিধানসভা নির্বাচনের পর।
রাজ্যের দুই নতুন রাজনৈতিক দল, প্রাক্তন মন্ত্রী আলতাফ বুখারির নেতৃত্বে আপনি পার্টি এবং আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী সাজাদ গণি লোনের নেতৃত্বে পিপলস কনফারেন্স (পিসি) এন সি এবং পিডিপি-র কাছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপি এখনও একটি প্রান্তিক শক্তি হিসেবেই রয়ে গেছে।
তবে প্রভাব যতই কম থাকুক জম্মু অঞ্চলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জম্মুর জনগণ বিশ্বাস করে যে উন্নয়ন তহবিল এবং সরকারি চাকরির বড় অংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় চলে গেছে। যে ক্ষোভ থেকে জম্মু বিভাগের সাধারণ ভোটাররা প্রকাশ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন।
যদিও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জম্মুর ভোটারদের মধ্যে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। রাজনৈতিক মহল মনে করে, এখনই নির্বাচন হলে বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি সাধারণের যে ক্ষোভ আছে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জম্মু বিভাগের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি ভালো ফল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমার ওপর ভরসা করেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জম্মু বিভাগের দুটি লোকসভা আসনে জিততে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও তফসিলি জাতি, উপজাতি, পাহাড়ি এবং বাল্মীকি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করার পরে, বিজেপি এই সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত বিধানসভা এলাকাতেও লাভবান হতে পারে।
উপত্যকার ৪৬ টি বিধানসভা আসনের মধ্যেও কিছু আসন বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে বলে মনে করা হলেও এর কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ উপত্যকা অঞ্চলে এখনও বিজেপির প্রভাব কার্যত শূন্য। জম্মু বিভাগে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পুঞ্চ, রাজৌরি এবং ডোডা জেলায় এনসি-র পক্ষ থেকে বিজেপির জন্য ভালোরকমের চ্যালেঞ্জ আসবে।
অন্যদিকে জম্মু বিভাগে কংগ্রেসও ভালো ফল করার ক্ষেত্রে আশাবাদী। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারের নেতৃত্ব দিলে কংগ্রেস কতটা লাভবান হতে পারবে তা নিয়েও সংশয় আছে।
যদিও নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা সত্ত্বেও, বিজেপির পক্ষে উপত্যকায় এখনও পর্যন্ত কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন