মহালয়ার এখনও বাকি দু'দিন। সেদিন থেকেই সূচনা হয় দেবীপক্ষের। কিন্তু তার আগে পিতৃপক্ষ থেকেই শুরু হল পুরুলিয়ায় পঞ্চকোট রাজপরিবারের দুর্গা পুজো। ইতিহাস বিজড়িত এই পুজো চলবে ১৬ দিন ধরে। রাবণবধের জন্য রামচন্দ্র দুর্গার ‘বোধন’ করেছিলেন। সেই অকালবোধনের মত অনুসারে দেবীপক্ষের আগেই শুরু হয় শিখরবাসিনী দুর্গাপুজো।
জিতাঅষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে আদরা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে এই পুজো হয়। জানা যায়, শিখরবাসিনী দুর্গার পুজো হয় গুপ্তমন্ত্রে। এখানে মায়ের আসনও গুপ্ত। পুজোর মন্ত্র এতটাই গোপনীয় যে মন্ত্রের লিপি আজও অপ্রকাশিত। দুহাজারেরও বেশি বছর পরেও এখনও সেই মন্ত্র লিপিবদ্ধ হয়নি। শুধু গাছের ছালে সংস্কৃত ও পালি ভাষায় ৯টি পাতায় ন'টি লাইন লেখা।
শিখরবাসিনী দুর্গা এখানে অষ্টধাতুর তৈরি, চতুর্ভুজা। যার একহাতে জপমালা, অন্যহাতে বেদ এবং বাকি দুই হাতে বরদা ও অভয়া। গলায় রয়েছে নর মুণ্ডমালা। পদ্ম ফুলের ওপর বসে থাকেন মা। মায়ের সেই গুপ্ত আসনকে বলা হয় ‘সোড়ন’। একটি তলোয়ারও পুজো হয়, যার নাম ‘ভূতনাথ তাগা’।
জানা গেছে, অন্যান্য সময় মার্বেল পাথরের একটি বড় সিংহাসনের ওপরে একটি রুপোর সিংহাসনের মাঝে সোনার সিংহাসনের মাথায় শিখরবাসিনী দুর্গা অধিষ্ঠান করেন। কিন্তু মহাসপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত দেবীকে গুপ্ত আসনে বসানো হয়।
বর্তমানে পঞ্চকোট রাজ দেবোত্তর-র সেবাইত বিশ্বজিৎপ্রসাদ সিং দেও জানিয়েছেন, “৮০ তম পুরুষ ধরে এই গুপ্ত মন্ত্রে মায়ের পুজো চলছে। যে গাছের ছালে এই মন্ত্র লেখা রয়েছে তার অবস্থা মনে করুন। হাত দিলেই ঝুরঝুর করে পড়তে থাকে। ওই ভূর্জ পত্র মায়ের চরণে রেখে দিই। গুপ্ত মন্ত্র আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। দেখতে হয় না।”
জানা যায়, প্রাচীন কালে এই রাজপরিবারে এসেছিলেন যদুভট্ট। বেনারস থেকে দুর্গাপুজোতে গান গাইতে আসতেন গহরজান, জানকীবাই, মালকার মত সঙ্গীতজ্ঞরা। ঝাড়খণ্ড থেকে আসতেন কমলা ঝরিয়াও।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন