দিল্লিতে বিজেপির ‘বুলডোজার রাজনীতি’র নিয়ে একযোগে সরব হয়েছে বাম-কংগ্রেস এবং তৃণমূল। সকলেই গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছে। বিরোধীদের আরও দাবি, বুলডোজারের এই রাজনীতি মূল্যস্ফীতি, পেট্রোল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশজুড়ে বাড়তে থাকা বেকারত্বের সমস্যার জ্বলন্ত অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে নজর ঘোরানের চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বিষয়ে এখনই রাশ না টানলে শ্রীলঙ্কার থেকেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে ভারতে, এমনটাই মনে করছে বিরোধীরা।
শনিবার, প্রবীণ বাম নেতা হান্নান মোল্লা এই প্রসঙ্গে IANS-কে জানান, ‘বিজেপি- আরএসএস সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেছে। এই বুলডোজার রাজনীতি তারই জঘন্যতম অংশ।’
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ এবং সিপিআইএম-এর প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা আরও জানান, ‘ক্ষমতাসীন বিজেপির ‘বুলডোজারের রাজনীতি’র বিপদ বোঝার সময় এসে গেছে। এটি একটি চক্রান্ত। যার মাধ্যমে কৌশলে গেরুয়া সরকার দেশের জ্বলন্ত অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণের মনোযোগ সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিজেপি সরকারের শ্রীলঙ্কার অবস্থা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। যদি এভাবে বুলডোজার রাজনীতি চলতে থাকে, তাহলে এদেশে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে। মানুষ বাধ্য হয়ে গণআন্দোলনে নামবে, যা কারো নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফলে দেশবাসী বিপদে পড়বেন।’
প্রথম থেকেই বিজেপির ‘বুলডোজার রাজনীতি’র নিয়ে সরব হয়েছে বামেরা। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, বুলডোজার রুখেছে। আইনি পথে গিয়েও বিজেপির এই কর্মকাণ্ড থামাবার চেষ্টা চালিয়েছে তাঁরা। শুক্রবার কলকাতায় DYFI-এর সমাবেশ থেকে এই নিয়ে সরব হন CPIM সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনিও শ্রীলঙ্কার ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, "সরকারের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের উদাহরণ আমাদের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার সরকারের। সরকারের বোঝা উচিৎ জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক, সরকার কেবল ম্যানেজার। জনগণ সেই ম্যানেজারকে অপসারণের ক্ষমতা রাখে।"
তবে পথে না নামলেও এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর ঘটনার পর গত ২১ এপ্রিল, বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনের মাঝে বিজেপির বুলডোজারের রাজনীতির বিরুদ্ধে সুর তুলেছিলেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা বুলডোজার রাজে বিশ্বাস করি না। আমাদের লক্ষ্য, জনগণকে বিভক্ত করা নয়। বরং আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই, যেহেতু ঐক্যই আমাদের শক্তি।’
এই ইস্যুতে সরব বিজেপি বিরোধী দলগুলিতে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, ‘বুলডোজার রাজনীতি’ বা ‘বুলডোজার বাবা’ শব্দ ব্যবহার করে বিরোধী শক্তিগুলি অবৈধ দখলকারীদের উৎসাহিত করছে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ অমল কুমার মুখোপাধ্যায় বিজেপির বুলডোজার রাজনীতিকে আগুন নিয়ে খেলার সামিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অতীতেও বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী শাসকেরা আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত, গণআন্দোলনের কাছে তাদের নতিস্বীকার করতে হয়েছে। দিল্লিতেও এই বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে এবং কর্তৃপক্ষকে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। তবে, এখন যে মনোভাব বিজেপি পরিচালিত পুরনিগম দেখিয়ে চলেছে, তার পরিণাম খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন