লোকসভা নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-তে কোনও আবেদন নয়। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সদস্যদের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে এরকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন সরকার গঠনের পরেই সদস্যরা যেন ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের শান্তনু ঠাকুর গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মহীতোষ বৈদ্য জানিয়েছেন, সংগঠনের সমস্ত সদস্যদের জানানো হয়েছে, পরবর্তী সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত কেউ যেন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন না করেন।
সংবাদমাধ্যমের কাছে মহীতোষ বৈদ্য জানিয়েছেন, সিএএ জারি হবার পর সংগঠনের অনেক সদস্যই অনলাইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে গেছিলেন। কিন্তু আবেদন করার সময় কলম ৫ পূরণ করতে গিয়ে তাঁরা সকলেই অসুবিধের মুখে পড়েন। এই কলমে আবেদনকারীদের বাংলাদেশের বাসস্থানের ঠিকানা এবং সেই সংক্রান্ত তথ্য জমা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করার সুবাদে ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড পাবার পর অনেকেই তাঁদের পুরোনো সমস্ত নথি নষ্ট করে ফেলেছেন। কারণ একইসঙ্গে দুই দেশের নথি রাখলে তাঁদের বিদেশী আইনে আটক করা হতে পারে।
উল্লেখযোগ্যভাবে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ বর্তমানে দু’ভাগে বিভক্ত। যার একটি বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নিয়ন্ত্রণে এবং অন্য গোষ্ঠী তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের নিয়ন্ত্রণে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছিলেন, তিনিও সিএএ-তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। যা নিয়ে তুমুল বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
শান্তনু ঠাকুরের মন্তব্যের উত্তরে তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর জানিয়েছেন, আমি যতদূর জানি তিনি জন্মগতভাবে ভারতীয়। এখন শুনছি তিনিও নাগরিকত্বের আবেদন করবেন। তাহলে কি ধরে নিতে হবে তিনি এক ভারতীয় নাগরিক না হয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন? আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, হয় তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করুন নয়তো তিনি জনগণকে বোকা বানানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের মত একই কথা জানিয়েছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। তিনি জানান, কেন্দ্রে তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি সরকার আসার পর সিএএ নিয়ম আরও সহজ করা হবে এবং তারপরেই যেন সদস্যরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।
গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে সিএএ বিজ্ঞপ্তি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য চালু করা হয়েছে সিএএ পোর্টাল। এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অ-মুসলিম, অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্শি এবং ক্রিশ্চানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবে। যাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে তাদের সকলকেই ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-র আগে ভারতে প্রবেশ করার নথি থাকতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ এবং নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার কমপক্ষে ৩০টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের ভালো প্রভাব আছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন