নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্যই ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সৈন্যদের উপর বিধ্বংসী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল এবং এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নিষেধ করেছিলেন তাঁকে। বিস্ফোরক এই মন্তব্য করলেন জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন গভর্নর সত্যপাল মালিক।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়ার’-এ বিশিষ্ট সাংবাদিক করণ থাপারকে শুক্রবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলওয়ামা কাণ্ড থেকে শুরু করে ৩৭০ ধারা লোপ, বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষ, বিবিসি’র তথ্যচিত্র, রাহুল গান্ধীকে সংসদ থেকে সরানো সহ একাধিক বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন গভর্নর।
বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে মালিক জানিয়েছেন, পুলওয়ামাতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কনভয়ে আক্রমণ ভারতীয় সিস্টেম এবং বিশেষ করে সিআরপিএফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের "অযোগ্যতা" এবং "অবহেলার" ফলাফল। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন রাজনাথ সিং।
মালিক জানিয়েছেন, সিআরপিএফ তার জওয়ানদের পরিবহনের জন্য একাধিকবার বিমানের দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। এমনকি জওয়ানদের যাওয়ার আগে রুটটি যথাযথভাবে স্যানিটাইজ করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পুলওয়ামাতে হামলার সময় করবেট পার্কে শ্যুটিং করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মালিক জানান, হামলার পরেই এই সমস্ত ত্রুটিগুলির কথা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জানান তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে এই বিষয়ে চুপ থাকতে বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাফিলতির বিষয়ে কারও সামনে মুখ খুলতে না বলেন। এরপর এনএসএ অজিত ডোভালকে ফোন করেন তিনি। তিনিও তাঁকে চুপ থাকার পরামর্শ দেন।
মালিক জানান, “প্রধানমন্ত্রী এবং ডোভালের কথা শুনে আমি তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করি যে এই ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়ে সরকার ও বিজেপি নির্বাচনী সুবিধা অর্জন করতে চাইছে।“
পুলওয়ামার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলেছেন মালিক। তিনি বলেন, ৩০০ কিলোগ্রাম RDX বিস্ফোরক বহনকারী গাড়িটি পাকিস্তান থেকে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু ১৫ দিন ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল গাড়িটি। অথচ গোয়েন্দারা কিছুই জানতে পারলো না।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মালিক আরও বলেন, "প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ, কিছুই জানেন না। উনি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, বাকি সব চুলোয় যাক। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে আমাকে গোয়ার রাজ্যপালের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ বেশ কয়েকটি দুর্নীতি আমি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছিলাম, যেগুলো সরকার মোকাবিলা করার পরিবর্তে উপেক্ষা করতে চেয়েছিল। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনও মাথা ব্যথা নেই। উনি দুর্নীতিকে অপছন্দ করেন না।"
পুলওয়ামা ছাড়াও একাধিক বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। তিনি জানান, জম্মু কাশ্মীরের গভর্নর থাকাকালীন বিজেপি-আরএসএস নেতা রাম মাধব একটি হাইড্রো-ইলেকট্রিক স্কিম এবং একটি রিলায়েন্স বীমা স্কিমে অনুমোদন দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁকে ৩০০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি।
প্রাক্তন গভর্নর স্পষ্ট জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজত্ব অপসারণ করার সিদ্ধান্ত একটি ভুল ছিল এবং অবিলম্বে এটি পুনরুদ্ধার করা উচিত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন