Mayawati: তিন সংস্থার সাঁড়াশি চাপ - বিরোধী রাজনীতি ও আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন মায়াবতী

মায়াবতী এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, ১৯৯৭ এবং ২০০৩ সালে রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য তার সাথে মিত্রতার পথ বেছে নিয়েছিল বিজেপি। যদিও এর আগে ১৯৯৫ সালে এই দুই দলের বিচ্ছেদে যথেষ্ট তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল।
BSP সুপ্রিমো মায়াবতী
BSP সুপ্রিমো মায়াবতীফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

১৯৯৫ সালে, বহুজন সমাজ পার্টির সভাপতি মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ হিসেবে সাড়া জাগিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, ১৯৯৭ এবং ২০০৩ সালে রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য তার সাথে মিত্রতার পথ বেছে নিয়েছিল বিজেপি। যদিও এর আগে ১৯৯৫ সালে এই দুই দলের বিচ্ছেদে যথেষ্ট তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল।

২০০৩ সালে তাজ হেরিটেজ করিডর মামলা শুরু হলে বিজেপি সঙ্গে মায়াবতীর আবারও বিচ্ছেদ হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও দুই রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

২০০২-০৩ সালের কথিত কেলেঙ্কারীগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কেলেঙ্কারি হিসেবে তাজ করিডর মামলাকে দেখা হত। যেখানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এবং তার সরকারের এক মন্ত্রী নাসিমুদ্দিন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

তাজ করিডোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল তাজমহলের কাছে পর্যটনের সুবিধা আরও উন্নত করার উদ্দেশ্যে। মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ওই সময় তাজমহলের কাছে এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্রের তৎকালীন বিজেপি সরকার। যদিও, পরে বিজেপি পিছু হটে এবং পরবর্তী সময় বলতে শুরু করে যে তাজ করিডর প্রকল্পে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র ছিলনা। একইসঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকে তাজমহলের কাছে নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য মায়াবতীকে দোষারোপ করাও শুরু হয়।

তাজ করিডর প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় ছিল ১৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বিজেপির সমর্থনে শুরু হয়েছিল এবং ২৫ আগস্ট, ২০০৩-এ মায়াবতীর দলের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর এই প্রকল্প বাধাপ্রাপ্ত হয়।

তাজ হেরিটেজ করিডোর প্রকল্পের প্রতি বিজেপির বিরোধীতা বুঝতে পেরে মায়াবতী তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ মায়াবতী আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যে মামলা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রাথমিকভাবে, এই মামলার বেশ দ্রুততার সঙ্গে এগোতে শুরু করে। এই সময় সিবিআই তাঁর বিভিন্ন ঠিকানায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় এবং দাবি করে যে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি মাত্র ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আয় করেছেন বলে দাবি করেছিলেন, কিন্তু এই সময়েই তাঁর এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা বেড়েছিল বেড়ে গিয়েছিল আড়াই কোটি টাকা।

২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, প্রকল্পের প্রাক্তন সরকারি কৌঁসুলি অজয় ​​আগরওয়াল, এই প্রকল্প থেকে মায়াবতী লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ জানান। তিনি আরও বলেন, মায়াবতী সম্প্রতি তাঁর নিজের নামে এবং তার আত্মীয়দের নামে বেশ কিছু সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। যদিও এরপর এই তদন্তের গতি থমকে যায়।

রাজনৈতিক মহলের অনুমান, কেন্দ্র বিএসপিকে রাজনৈতিকভাবে আটকানোর জন্য মাঝে মধ্যেই এই মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনে। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতীর পরাজয়ের পর, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মায়াবতীর উপস্থিতি এবং ক্ষমতা দ্রুত কমতে শুরু করে। এই সময় মায়াবতীর একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও তাঁকে ছেড়ে যায় এবং মনে করা হয় এঁরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ হস্তান্তরের ভয় দেখায়। প্রাক্তন বিএসপি মন্ত্রী নাসিমুদ্দিন সিদ্দিকী এখন কংগ্রেসের এক আঞ্চলিক সভাপতি। এই কেলেঙ্কারিতে নাম ওঠা বাবু সিং কুশওয়াহাও এখন বিএসপিতে নেই।

তাজ করিডোর মামলার তদন্তের সময়, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র একটি অ্যাকাউন্টে মোট ১০৪ কোটি টাকা এবং মায়াবতীর ভাই আনন্দ কুমারের ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্টে ১.৪৩ কোটি টাকা নগদ জমা হয়েছিল বলে জানায়। আধিকারিকরা আরও জানিয়েছিলেন, ব্যাঙ্কগুলিতে সন্দেহজনক এবং বিপুল নগদ জমা পরীক্ষা করার জন্য ইডি তদন্তের অংশ হিসাবে, ইউবিআই-এর করোলবাগ শাখায় অভিযান চালায় এবং নোট বাতিলের পরে এই দুই অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা জমা পড়েছে বলেও জানায়।

ইডি আধিকারিকদের বক্তব্য অনুসারে, ওই সময় বিএসপির অ্যাকাউন্টে ১০০০ টাকার নোটে ১০২ কোটি টাকা জমা পড়ে এবং পুরোনো ৫০০ টাকার নোটে জমা পড়ে ৩ কোটি টাকা। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা নগদ জমা করা হয়েছিল। ইডি একই শাখায় মায়াবতীর ভাই আনন্দের আরও একটি অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে, যেখানে ১.৪৩ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এই অ্যাকাউন্টে নোট বাতিলের পর পুরনো নোট ব্যবহার করে ১৮.৯৮ লক্ষ টাকা জমা করা হয়েছে।

ইডি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে এই দুই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিশদ জানতে চেয়েছে। ইডি ব্যাঙ্ককে ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ এবং অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যবহৃত কেওয়াইসি নথি চেয়ে পাঠায়।

সিবিআই, ইডি এবং আয়কর বিভাগের ধাক্কায়, মায়াবতী সম্ভবত রাজনীতিতে তাঁর আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান। তাই ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এখন তাঁর সুর এখন অনেক নরম এবং বিরোধীদের প্রতি তাঁর সুর অনেকটাই চড়া।

মায়াবতীর এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তার দল বিএসপি-ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিএসপি-র শক্তি কমেছে। এই মুহূর্তে বিএসপি-র দখলে আছে মাত্র একটি আসন। সংসদে, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিএসপি সাংসদদের মধ্যেও যথেষ্ট অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সূত্র অনুসারে, ইডি, সিবিআই, আয়কর সংস্থার তদন্তের কারণেই মায়াবতী এই মুহূর্তে নিজেকে বিরোধী রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন এবং স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি এই জাতীয় কোনও উদ্যোগের অংশ হবেন না।  

আরও পড়ুন

BSP সুপ্রিমো মায়াবতী
Uttar Pradesh: আসন্ন নির্বাচনে লড়বেন না বিএসপি নেত্রী মায়াবতী
BSP সুপ্রিমো মায়াবতী
'বৃহত্তর জনস্বার্থে' উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে NDA জোটের প্রার্থীকে সমর্থন করবে BSP: মায়াবতী

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in