উচ্চ গাড়ওয়াল হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত চারধাম যাত্রার জন্য স্বাস্থ্য পরামর্শ বিধি জারি করা সত্ত্বেও, সরকারী তথ্য অনুসারে, কঠোর আবহাওয়া এবং স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমস্যার কারণে এখনও পর্যন্ত এই যাত্রাপথে এবার ২০৩ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
গত ৩ মে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন চারধাম যাত্রা শুরু হয়। রিপোর্ট অনুসারে অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। কঠোর পাহাড়ি আবহাওয়াও বহু মানুষের স্বাস্থ্যজনিত বিপর্যয়ের কারণ। বিশেষ করে বয়স্ক তীর্থযাত্রীদের, যাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সহ সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ২৬ জুন পর্যন্ত, চারধাম যাত্রায় আসা ২০৩ জন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে কেদারনাথে। বদ্রীনাথে ৫১ জন, যমুনোত্রীতে ৪২ জন এবং গঙ্গোত্রীতে ১৩ জন মারা গেছেন। যদিও চারধাম যাত্রায় মৃত্যু নতুন কিছু নয়, তবে এবারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অস্বাভাবিকভাবে বেশি মৃত্যুর কারণ এ বছর বেশি ভক্তের আগমন বলে মনে করা হচ্ছে।
অধিক সংখ্যায় মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধন সিং রাওয়াতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং চারধাম যাত্রায় আসা ভক্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলি সোশ্যাল মিডিয়া সহ সমস্ত মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, যাতে ভক্তরা সেগুলি অনুসরণ করে এবং তাদের যাত্রাপথে কোনও সমস্যায় না পড়েন।
এর আগে ২০১৯ সালে, চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে ৯০ জনেরও বেশি তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০২ এবং ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১১২। এই সমস্ত পরিসংখ্যানগুলিই এপ্রিল-মে মাসে যাত্রা শুরু হওয়ার থেকে অক্টোবর-নভেম্বরে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ছয় মাসের সময়ের জন্য।
কোভিড মহামারীর কারণে গত দু’বছর যাত্রা বন্ধ ছিলো। এবার ফের চারধাম যাত্রা শুরু হওয়ায় দেশ থেকে এবং বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের বিশাল ভিড় হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মাত্র আড়াই মাসে আড়াই লাখের বেশি ভক্ত চারধাম দর্শন করেছেন।
উত্তরাখণ্ড সরকার ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চারধাম - বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রীতে আসার পরিকল্পনা করা যাত্রীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য পরামর্শ জারি করেছে। তাদের চরম ঠাণ্ডা, কম আর্দ্রতা, অক্সিজেনের অভাব, নিম্ন বায়ুচাপের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে। যাত্রা শুরুর আগে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই যাত্রা শুরু করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও, কোনও সমস্যা হলে, তাদের অবিলম্বে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছানোর এবং হেল্পলাইন নম্বর ১০৪-এ যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ অনেক বয়স্ক, অসুস্থ এবং অতীতে যারা কোভিড-এ সংক্রামিত হয়েছে তাদের যাত্রা এড়াতে বা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে। তীর্থযাত্রীদের মন্দিরে পৌঁছানোর আগে পথে এক দিনের বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তাদের গরম ও পশমী কাপড় বহন করতে, যাত্রার সময় জল পান করতে, ক্ষুধার্ত না হতে, দীর্ঘ হাঁটার সময় বিরতিহীন বিশ্রাম নিতে এবং উচ্চ উচ্চতায় ব্যায়াম না করতে বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকার এই উদ্দেশ্যে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরামর্শ জারি করেছে। সরকারি রিপোর্ট অনুসারে যাত্রা চলাকালীন এবছর যারা মারা গেছনে তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৫০ বছরের বেশি ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই করোনভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল। আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে চারধাম যাত্রা পথে অবিচ্ছিন্নভাবে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এখনও পর্যন্ত ৩,৭৬,৫৪৭ জনের স্ক্রীনিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জন যাত্রীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন