কোভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ভারতে প্রায় সাড়ে ৪৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর এই দাবি করা হয়েছে। এই সংখ্যা দেশে কোভিডে মৃত্যুর সরকারী পরিসংখ্যানের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। এর পাশাপাশি বিশ্বের একাধিক দেশ কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে 'হু'-র রিপোর্টে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী মহামারীর প্রথম দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) গোটা বিশ্বে এই ভাইরাসের প্রভাবে প্রায় ১.৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতে কোভিডের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৪৭.৪ লক্ষ মানুষের। যদিও সরকারী হিসেবে এই নির্দিষ্ট সময়ে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪.৮১ লক্ষ।
WHO-র দাবি, ২০২০ সালেই কোভিডের কারণে ভারতে প্রায় ৮.৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ওই বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে ৬২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর মৃতের সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তা ৮.৩ লাখে গিয়ে পৌঁছায় এবং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ গত ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে তা দাঁড়ায় ২৭ লক্ষে। তবে শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও কোভিডে মৃত্যু সংখ্যা গোপন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে WHO-র রিপোর্টে।
বিশ্বের হিসেবে এখনও পর্যন্ত কোভিডে মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৪ লাখ। WHO-র রিপোর্ট অনুযায়ী এই সংখ্যা ১.৫ কোটি। বেশিরভাগ অতিরিক্ত মৃত্যু (৮৪ শতাংশ) হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায়। অতিরিক্ত মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে কেন্দ্রীভূত। মহিলাদের (৪৩ শতাংশ) তুলনায় পুরুষদের (৫৭ শতাংশ) মৃত্যু হয়েছে বেশি।
তবে WHO-র এই রিপোর্ট অস্বীকার করেছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই রিপোর্টের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। গাণিতিক পদ্ধতিতে যেভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা পরিসংখ্যানগতভাবে অযৌক্তিক। তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভারতে এভাবে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে আপত্তি জানিয়েছিল। তা সত্তেও এভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিঃ লিউ জেনমিন এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “জাতিসংঘের ব্যবস্থা মহামারী থেকে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাপী প্রাণের একটি প্রামাণিক মূল্যায়ন করার জন্য একসাথে কাজ করছে। এই কাজটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অনুমান উন্নত করতে WHO এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে UN DESA-এর বর্তমান সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
UN DESA-এর পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক স্টেফান স্কিউনফেস্ট এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন : "তথ্যের ঘাটতির ফলে মানুষের জীবনের জন্য গুরুতর পরিণতি সহ একটি সংকটের প্রকৃত মূল্যায়ন করা কঠিন করে তোলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন