উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সরকারকে সময় দিল যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। এর মধ্যে যদি বকেয়া ডিএ’র দাবি না মেটানো হয় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
মহার্ঘ ভাতার দাবিতে শুক্রবার ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল ৩৫টি রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সম্মিলিত সংগঠন - যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ শামিল হয়েছে এই ধর্মঘটে। যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, নবান্ন ছাড়া রাজ্যের অন্যান্য সমস্ত সরকারি অফিসগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী কাজে যোগ দেননি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, প্রশাসন দেখেছে সম্মিলিত ধর্মঘট কাকে বলে। গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে আন্দোলন চলবে। সরকারের মন্ত্রী, বিধায়কদের বেতন ভাতা ক্রমাগত বাড়ে, সরকারের কর্মীদের বেতন বাড়ে না কেন?
যৌথমঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ জানান তাঁদের দাবিদাওয়া না মিটলে আগামী দিনে লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। দিল্লির যন্তরমন্তরে কিছু দিনের মধ্যেই ধর্না দেওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। আগামী ৫ এপ্রিল দিল্লিতে শ্রমিক কৃষক খেতমজুরদের পার্লামেন্ট অভিযান। সেখানেও অংশ নেবেন এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা।
যৌথ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী একবার বলছেন ৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছে। আরেকবার বলছেন ১০৫ শতাংশ ডিএ দেওয়া হয়েছে। আসলে তিনি ডিএ না দেওয়ার নানা বাহানা তুলেছেন। ডিএ না দেওয়া মানে কর্মচারীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এই গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতেই আমাদের আন্দোলন।
যদিও সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি। শুক্রবার সন্ধ্যার পর নবান্ন থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ধর্মঘটের কোনো প্রভাবই পড়েনি সরকারী দফতরগুলিতে। ৯০ শতাংশ কর্মীই এদিন নিজ নিজ দফতরের কাজে যথাসময়ে যোগ দিয়েছেন এবং কাজ করেছেন। প্রশাসনিক কাজে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।
সরকার জানিয়েছে, যে ১০ শতাংশ কাজে যোগ দেননি তাঁদের অধিকাংশই বৈধ কারণে ছুটি নিয়েছিলেন। তবে যে কয়েকজন সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে নবান্ন এই দাবি করলেও ছবি অন্য কথা বলছে। এদিন নব মহাকরণ, খাদ্যভবন, ক্রেতা সুরক্ষা ভবন, কৃষি বিপণন ভবন, স্বাস্থ্য ভবন কার্যত ফাঁকা ছিল। সব থেকে বেশি সাড়া পড়ে আদালত কর্মচারীদের মধ্যে। স্কুল ও কলেজগুলিতেও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। ছাত্রদের উপস্থিতিও কম ছিল।
ধর্মঘটে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের কর্মীরা। কর্পোরেশনের গ্যারেজ, অ্যশফল্ট প্ল্যান্ট, বরো অফিস, ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তর, বিল্ডিং দপ্তরের ১০০ শতাংশ কর্মীই ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তবে জঞ্জাল নিষ্কাশন, শ্মশান, বিদ্যুৎ এবং আলোক বিভাগের মতো জরুরি পরিষেবার কাজ চালু ছিল।
রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে ধর্মঘটীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে পুলিশের। জেলার কৃষি দফতরে ধর্মঘটীদের উপর বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়াতেও কিছু কিছু জায়গায় অশান্তির খবর মিলেছে।
ধর্মঘট রুখতে একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সরকার। নবান্ন জানিয়েছিল, ধর্মঘটের দিনে গরহাজির কর্মচারীদের বেতন কাটা হবে। কর্মজীবনেও ছেদ (সার্ভিস ব্রেক) পড়বে। কিন্তু সরকারের এই ফতোয়া উড়িয়ে এদিনের ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন কর্মীরা। ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছিল বামপন্থী সরকারি কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। এ দিন শহীদ মিনারের সামনে সরকারি কর্মীদের অবস্থান মঞ্চে সংহতি জানাতে আসেন আইনজীবী ফেরদৌস শামিম, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য বিরোধী নেতা এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন