ভারত রাষ্ট্র সমিতির (BRS) কার্যনির্বাহী সভাপতি কে টি রামা রাও মঙ্গলবার জানিয়েছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২০২৬ সালের পরে লোকসভা আসনগুলির পুনর্বিন্যাসে দক্ষিণের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এক চরম অবিচার হবে৷
এই প্রসঙ্গে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলি, যারা প্রগতিশীল মানসিকতার সাথে কেন্দ্রের নীতি মেনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা জনসংখ্যা ভিত্তিক সীমাবদ্ধতায় গুরুতর অবিচারের শিকার হতে পারে।
২০২৬-এর পরে লোকসভা আসনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা-ভিত্তিক পুনর্বিন্যাস হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে থাকা উত্তরের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে লোকসভা আসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। যার ফলে লোকসভায় দক্ষিণের রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কমবে।
কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখলে ২০২৬-এর পরে আসন পুনর্বিন্যাস শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র উদ্বোধন করা নতুন সংসদ ভবনের আসন সংখ্যা থেকেও এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। লোকসভায় বর্তমান আসনের সংখ্যা ৫৪৩। যদিও নতুন সংসদ ভবনে ৮৮৮ সদস্যের জন্য জায়গা রয়েছে।
একইভাবে, রাজ্যসভার নতুন ভবনে ৩৮৪ সদস্যের আসন সংখ্যা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান রাজ্যসভায় আসন সংখ্যা ২৪৫।
এক প্রতিবেদন অনুসারে, পুনর্বিন্যাসের পরে লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ৮৪৮। অনুমান করা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ক্ষেত্রে আসন বেড়ে হবে ২২২। অন্যদিকে দক্ষিণের রাজ্যগুলির আসন হবে মাত্র ১৬৫ এবং অন্যান্য রাজ্যগুলিতে ৪৬১টি আসন থাকবে।
এই প্রসঙ্গে কে টি আর এক বিবৃতিতে বলেন, "এটা অন্যায্য এবং বেদনাদায়ক যে দক্ষিণের রাজ্যগুলি, যারা প্রগতিশীল নীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে, এই নতুন সীমাবদ্ধতার কারণে কম লোকসভার আসন পাবে৷ অন্যদিকে, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে উত্তরের রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন সত্ত্বেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সফল ভাবে না করেও লোকসভার আসন বৃদ্ধির ফলে লাভবান হবে।”
তিনি আরও বলেন, যদি এই ঘটনা সত্যি হয় সেক্ষেত্রে তা হবে এক প্রতারণার নামান্তর এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলোর জন্য এক বড়ো ট্রাজেডি।
বিআরএস নেতা জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন যে কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যগুলি কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করে।
তিনি বলেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলি কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেই নয়, সমস্ত ধরণের মানব উন্নয়ন সূচকেও এগিয়ে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির মাত্র ১৮ শতাংশ জনসংখ্যা জাতীয় জিডিপি-র ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ অবদান রাখে।
বিআরএসের কার্যকরী সভাপতি জানিয়েছেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলি, যারা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়নে এত বেশি অবদান রাখছে, কোনোভাবেই অনুপযুক্ত লোকসভা ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাসের কারণে ভবিষ্যতে তাদের গুরুত্ব হারানো উচিৎ নয়।
তিনি বলেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলির এই প্রসঙ্গে সুর চড়ানো উচিৎ। কারণ প্রগতিশীল নীতি রূপায়ণ করে তার থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে গুরুতর অবিচারের শিকার হতে চলেছে এইসব রাজ্য। কে টি আর দক্ষিণের রাজ্যগুলোর নেতা ও জনগণকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন