২০১৬ সালে মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম (P. Chidambaram)।
বৃহস্পতিবার, এক মামলার আইনজীবী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে তিনি বলেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের নোট বাতিল ছিল ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ’ (deeply flawed)।
এদিন শীর্ষ আদালতে, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে মামলার সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম দাবি করেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের উদ্যোগে ব্যাঙ্কনোট বাতিলের প্রস্তাব করতে পারে না। এমন পদক্ষেপ একমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) সুপারিশের ভিত্তিতে হতে পারে। এটি অত্যন্ত আপত্তিকর সিদ্ধান্ত। ত্রুটিপূর্ণ ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করা উচিত।'
এরপরেই তিনি বলেন, ‘নোট বাতিল দেশের প্রতিটি নাগরিককে প্রভাবিত করেছে। এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI Act) আইনের ২৬ ধারা প্রয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতাকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।’ চিদম্বরম বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া খুবই আপত্তিজনক, যা আইনের শাসনকে উপহাস করেছে।’
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জানান, ‘ব্যাঙ্কের নোটের ইস্যু নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে RBI-এর৷ কিন্তু, তা খর্ব করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি ছাপাখানাগুলিতে নোট ছাপার সক্ষমতা প্রতি মাসে ৩০০ কোটি টাকা, সেখানে ২,৩০০ কোটি টাকার বেশি নোট বাতিল করা হয়েছিল। এর অর্থ, টাকা ছাপাতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে।’
চিদম্বরম বলেন, ‘২০১৬-১৭-এর জন্য RBI-এর বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ১৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকার নোটের বিনিময়ে মাত্র ৪৩ কোটি টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ আবদুল নাজিরের (Justice S. A. Nazeer) নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে। এই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি বি. আর. গাভাই (Justice B. R. Gavai), বিচারপতি এ. এস. বোপান্না (Justice A. S. Bopanna), বিচারপতি ভি. রামাসুব্রামানিয়ান ( Justice V. Ramasubramanian), এবং বিচারপতি বি.ভি. নাগারথনা (Justice B.V. Nagarathna)।
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর, এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি (Attorney General R. Venkataramani)। তিনি বলেন, 'নোটবন্দি সরকারের একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেই ব্যাপারে আদালতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।'
একইসঙ্গে, তিনি দাবি করেন, 'আইন মেনেই নোটবন্দি করা হয়েছিল। অর্থনীতির ক্ষতি আটকাতে ১৯৭৮ সালে জনস্বার্থে কিছু উচ্চ মূল্যের নোটের বিমুদ্রাকরণের লক্ষ্যে আইন তৈরি হয়েছিল।'
তবে, ভেঙ্কটরমানির সেই দাবি উড়িয়ে বিচারপতিদের বেঞ্চ জানায়, আদালত তাঁর ‘লক্ষ্মণ রেখা’র ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। কিন্তু, ২০১৬ সালে নোটবন্দির বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল কিনা, বা এর মধ্যে অন্য কিছু রয়েছে কিনা - তা খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট।
এখন, সেই মামলারই শুনানি চলছে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন