২০১৩ সালের ২০ আগস্ট। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও প্রাতঃভ্রমণে গেছিলেন ডঃ নরেন্দ্র দাভোলকর। ওইদিনই পুণের ওমকারেশ্বর মন্দির অঞ্চলে দুই অজ্ঞাতপরিচয় মোটর সাইকেল আরোহী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। আততায়ীদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির (MANS) কর্ণধার, ৬৭ বছর বয়সী দাভোলকর। ঘটনার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মূলচক্রীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
নরেন্দ্র দাভোলকরের মেয়ে মুক্তা দাভোলকর জানিয়েছেন, ‘১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত মূল চক্রীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও আমি আশা রাখি বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে।”
এই বছরের এপ্রিল মাসে বোম্বে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এই মামলার পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে চলছে। আদালত মনে এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় আর নজরদারির প্রয়োজন নেই।
আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহত যুক্তিবাদী বিজ্ঞানকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকরের মেয়ে মুক্তা দাভোলকর এবং ছেলে ডঃ হামিদ দাভোলকর।
উল্লেখযোগ্যভাবে অন্ধবিশ্বাস বিরোধী যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরকে হত্যা করা হয় ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট। এরপরেই ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় সিপিআই নেতা গোবিন্দ পানসারেকে এবং ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর খুন করা হয় যুক্তিবাদী এম এম কালবুরগিকে। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর খুন হন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ।
গত শুক্রবার ১৮ আগস্ট শীর্ষ আদালত এই ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে সিবিআই-এর কাছে জানতে চায় এই চার খুনের মধ্যে যোগসূত্র কী? বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ শীর্ষ আদালতে ডঃ নরেন্দ্র দাভোলকরের মেয়ে মুক্তা দাভোলকর এবং ছেলে ডঃ হামিদ দাভোলকরের করা আবেদনের শুনানির সময় একথা জানতে চাওয়া হয়।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার বেঞ্চকে জানান, এই চার হত্যার পেছনে বড়ো ষড়যন্ত্র আছে। তিনি আরও বলেন, এইসব হত্যাকান্ড থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে এই দাবি করা যেতেই পারে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতৃত্ব, যুক্তিবাদী ডঃ দাভোলকরকে হত্যার মূল চক্রী দক্ষিণপন্থী সনাতন সংস্থার পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দুই মূলচক্রীকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ২০১৪ সালে পুনে পুলিশের কাছ থেকে এই মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
২০২১ সালে পুণে আদালত এই হত্যাকান্ডের মূল চক্রী হিসেবে বীরেন্দ্র সিং তাওড়েকে অভিযুক্ত করে। ডঃ বীরেন্দ্রসিং তাওড়ে, শচীন অন্ধুরে, শারদ কালস্কর এবং বিক্রম ভাবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির এবং ইউএপিএর অধীনে হত্যা, হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পঞ্চম অভিযুক্ত, আইনজীবী সঞ্জীব পুনালেকরের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন