দিল্লি সহ দেশের বহু রাজ্যে লকডাউনের কারণে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধের ফলে, লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে গেছে। অনুমান করা হচ্ছে, সারা দেশে স্কুল ছুট দুই কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি শুধুমাত্র দিল্লি থেকেই। শিক্ষাবিদরা এখনই "যেকোন মূল্যে" স্কুল খোলার দাবি করছেন।
অল ইন্ডিয়া প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (AIPA) সভাপতি অশোক আগরওয়ালের মতে, এমন একটি "সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে" শুধুমাত্র দূষণের কারণে স্কুলগুলি বন্ধ রাখা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।
আগরওয়াল জানিয়েছেন, রাজধানী শহরে স্কুলগুলি বন্ধ থাকার কারণে "২০ লক্ষেরও বেশি" শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছে। "এর মধ্যে এক লাখেরও বেশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। সারা দেশে স্কুল ড্রপআউটের মোট সংখ্যা দুই কোটির বেশি।"
দিল্লির পাশাপাশি সারা দেশে কোভিড-১৯ মহামারীর সেকেন্ড ওয়েভ এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা থার্ড ওয়েভের পূর্বাভাস দিচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে বহু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অভিভাবক সংগঠন সবার জন্য স্কুল খুলে দিতে চাইছে।
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সিএস কান্দপালের মতে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, শিক্ষক, সহপাঠী এবং নিয়মিত ক্লাসের সাথে শিক্ষার্থীদের সংযোগ না থাকার কারণে ড্রপ আউটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যাটি আরও বড়, বিশেষ করে সেইসব ক্ষেত্রের জনসাধারণের মধ্যে যাদের কাছে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা এবং সংস্থান সম্পূর্ণরূপে পাওয়া সম্ভব নয়।
এআইপিএ-র পক্ষ থেকে আইএএনএস-কে জানানো হয়েছে, "একটি হিসেব অনুযায়ী, সরকারী স্কুলের প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী 'ড্রপআউট'। শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং নিরাপদ জায়গা হল স্কুল, এই সত্যকে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ রাখায় শিশু শ্রম, যৌন হয়রানি, অসুস্থতা, প্রভৃতি সামাজিক কুফলের শিকার হয়েছে শিশুরা। করোনা আনলক পর্বে যখন অন্যান্য সমস্ত কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে তখন কেন স্কুল শুরু হচ্ছে না?"
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকও ড্রপ আউটের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। মন্ত্রক জানিয়েছে, সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা স্কুল ড্রপ আউটের হার কমানোর জন্য একটি নীতি রূপায়ণের কাজ করা হচ্ছে।
মন্ত্রক আরও দাবি করেছে যে, 'নতুন শিক্ষা নীতি ২০২০'-র উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য, প্রতি রাজ্য থেকে এই জাতীয় শিশুদের তথ্য সংগ্রহ এবং সংকলন করা হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় ‘প্রবন্ধন’ নামে একটি পোর্টাল ও অনলাইন মডিউল তৈরি করেছে।
সম্প্রতি দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে, দিল্লি এবং কিছু প্রতিবেশী শহরের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি সরকারও বিশ্বাস করে যে মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
"এই বছর, শুধু শিশুদের শেখার ঘাটতি পূরণ করার জন্যই নয়, তাদের মানসিক সমর্থন দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের শেখার-শেখানো প্রক্রিয়ার জন্য আবার মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলতে হবে।"
একই সময়ে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন যে আগামী ৯ বছরে সারা দেশের স্কুলে ১০০ শতাংশ শিশুদের তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক নতুন শিক্ষানীতির অধীনে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রধান জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে, স্কুলগুলিতে ১০০ শতাংশ মোট নথিভুক্তির লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।
- with Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন