ইলেক্টোরাল বন্ড রাজনৈতিক দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়, যারা অবাস্তব লেনদেন থেকে উপকৃত বন্ধুদের হয়ে প্রচার করে। এখন অন্তত সুপ্রিম কোর্টে ২০১৮ সাল থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড-কে চ্যালেঞ্জ করে আসা আবেদনের শুনানি করা উচিৎ। মঙ্গলবার এক ট্যুইট বার্তায় একথা জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
ওই ট্যুইটে এক ডিজিটাল মিডিয়ার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ইয়েচুরি লেখেন, প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ৮০ শতাংশর বেশি বিজেপির কাছে গেছে, যা 'অবাধ ও সুষ্ঠু' নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করতে ব্যবহৃত হয়েছে। ইলেক্টোরাল বন্ড বাতিল করা হোক।
ইয়েচুরির ট্যুইটে উদ্ধৃত করা প্রতিবেদন অনুসারে, নির্বাচনী বন্ডের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দুটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে বিচারের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের (RTI) মাধ্যমে জানা গেছে যে চার বছরের মধ্যে (২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত) এই বন্ড ১৮টি ধাপে বিক্রি হয়েছে। বিক্রি হওয়া বন্ডের ৯২% ছিল ১ কোটি টাকার। এবং এই স্কিমের মাধ্যমে বেশিরভাগ ‘বেনামী রাজনৈতিক অনুদান’ বড় বড় কোম্পানিগুলির কাছ থেকেই এসেছে।
RTI কর্মী কমডোর লোকেশ কে. বাত্রা (অবসরপ্রাপ্ত) দ্বারা সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, গত চার বছরে প্রায় ৭৯৯৫ কোটি টাকার ১৫৪২০ টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে (সুনির্দিষ্টভাবে ৭৯৯৪,৯৭,৭৫,০০০ টাকা)। এর মধ্যে ৭,৯৭৪ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৫,২৭৪ টি নির্বাচনী বন্ড নগদ করা হয়েছে। তাই শুধুমাত্র ২০ কোটি টাকার একটু বেশি মূল্যের কিছু বন্ড নগদ ছাড়া রয়ে গেছে। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮০% বন্ড বিক্রি হয়েছে মাত্র চারটি শহরে – মুম্বাই (২৬.৮৬%), কলকাতা (২৫.০৪%), নতুন দিল্লি (১৪.৩৩%) এবং হায়দ্রাবাদ (১৩.৮৬%)৷ এর পরে, চেন্নাই, ভুবনেশ্বর, গান্ধীনগর এবং বেঙ্গালুরু এই চারটি শহরে প্রায় ১৮% বন্ড বিক্রি হয়েছে।
SBI-এর তথ্য থেকে জানা যায় যে, কলকাতায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে। কলকাতায় (৪,৯১১), মুম্বাই (৩,২০১), নতুন দিল্লি (২,০৫৫) এবং হায়দ্রাবাদ (১,৮৭৮) টি বন্ড বিক্রি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ১৫,৪২০ টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করা হয়েছিল। ৭,৪০৫ টি ছিল ১ কোটি টাকা মূল্যের। ৫,৬৮৩ টি ১০ লাখ টাকার মূল্যের। ২,১৫৫ টি ১ লাখ টাকা মূল্যের। ১০,০০০ টাকা মূল্যের ১২২ টি এবং ১,০০০ টাকার মূল্যের ৫৫ টি।
কী এই নির্বাচনী বন্ড?
এক বিশেষ ধরনের বন্ড, যা কিনে কেউ নিজের পছন্দের রাজনৈতিক দলকে দিতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেই বন্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেয়। এতে টাকার কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ যে কোনও পরিমাণ টাকার বন্ড কেনা যায়। উল্লেখ্য এই বন্ড কেনার সময় ক্রেতার নাম ঠিকানা ব্যাঙ্ককে জানাতে হয় না। ২০১৭ সালে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প চালু হওয়ার আগে কোম্পানি আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিধিনিষেধ ছিল। এই নির্বাচনী বন্ডে সেসবের বালাই নেই। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে বিক্রি হওয়া ইলেক্টরাল বন্ডের তিন-চতুর্থাংশ অর্থ বিজেপির তহবিলে ঢুকেছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) ২০২১ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছে। তাদের বক্তব্য, “রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালে ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিম হওয়ার পর থেকে এখানে প্রচুর পরিমাণে বেনামী অনুদান আসছে।” সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে লিখেছেন, “তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পিটিশনগুলির শুনানি হয়নি। এটি বিজেপিকে অশ্লীল অর্থশক্তি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন