সর্বাধিক ইলেক্টোরাল বন্ড কেনা প্রথম ৩০টি সংস্থার মধ্যে ১৪টিকেই কোনো না কোনো সময় ইডি, সিবিআই অথবা আয়কর দপ্তরের তল্লাশির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এমনই তথ্য উঠে আসছে অনলাইন নিউজপোর্টাল 'দ্য ক্যুইন্ট'র প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে।
বৃহস্পতিবারই ইলেক্টোরাল বন্ডের সমস্ত তথ্য জনসাধারণের জন্য ওয়েব সাইটে আপলোড করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে এমন বহু সংস্থাই রয়েছে যারা ইলেক্টোরাল বন্ড কেনার আগে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযানের মুখোমুখি হয়েছে।
এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে ফিউচার গেমিং এবং হোটেল সার্ভিসেস। এই কোম্পানি ১৩৬৮ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। ২০২২ সালে এই সংস্থা এবং তার সহ ডিস্ট্রিবিউটরদের ৪০৯ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। এরপর ১০০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কেনে ওই সংস্থা।
এরপরেই আছে তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ২০১৯ সালে এই সংস্থার একাধিক শাখায় হানা দিয়েছিল আয়কর দফতর। তারপর মোট ৯৬৬ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে এই সংস্থা।
হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডও ২০২০ সালে সিবিআই হানার সম্মুখীন হয়েছিল। তারপর থেকে ৩৭৭ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে সংস্থাটি।
বেদান্ত লিমিটেড - বেদান্ত গ্রুপের তালওয়ান্দি সাবো পাওয়ার লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২২ সালে সেই কোম্পানিতে তল্লাশি চালায় ইডি। তারপর থেকে ৪০০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে সংস্থাটি।
এই তালিকায় হায়দরাবাদ ভিত্তিক এক হাসপাতালও রয়েছে। যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ২০২০ সালে আয়কর হানা হয়। ২০২১ সালে ১৬২ কোটি টাকা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিয়েছিল হাসপাতালটি।
এরপর রয়েছে ডিএলএফ কমার্শিয়াল ডেভেলপার্স লিমিটেড। ২০১৯ সালে সিবিআই এবং ২০২৩ সালে ইডি হানা দেয় এই সংস্থায়। ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ১৩০ কোটি টাকা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিদেশি বিনিয়োগ নিয়মলঙ্ঘন করার অভিযোগে জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড সংস্থায় ২০২২ সালে ইডি অভিযান চলেছিল। এই সংস্থা ১২৩ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছে।
২০২১ সালে চেন্নাই গ্রীনউডস প্রাইভেট লিমিটেডে ২০২১ সালে আয়কর হানা হয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালে এই সংস্থা ১০৫ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল।
ডাঃ রেড্ডিস ল্যাবোরেটোরিজ লিমিটেডেও ২০২৩ সালে আয়কর হানা হয়েছিল। তারপরই দেখা যায় ৮০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল সংস্থাটি।
আইএফবি অ্যাগ্রো লিমিটেডেও কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান চলেছিলে। তারপর মোট ৯২ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল সংস্থাটি।
হায়দরাবাদ ভিত্তিক একটি সংস্থা এনসিসি লিমিটেডে ২০২২ সালে আয়কর হানা নয়। তারপরই সাংস্থাটি ৬০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল।
হায়দরাবাদ ভিত্তিক আরও একটি সংস্থা দিভি এস ল্যাবোরেটোরিও ৫৫ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল। এই সংস্থায় ২০১৯ সালে আয়কর অভিযান হয়েছিল।
ইউনাইটেড ফসফরাস ইন্ডিয়া লিমিটেড নামক সংস্থাতেও ২০২০ সালে আয়কর হানা হয়েছিল। পরে দেখা যায় ৫০ কোটি টাকা ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছিল।
২০২২ সালে অরবিন্দ ফার্মার ডিরেক্টর শরৎ রেড্ডিকে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল ইডি। দিল্লির আবগারি দুর্নীতির সাথে এই সংস্থার যোগ ছিল বলে অভিযোগ। তারপর দেখা যায় ১.৬ কোটি টাকা ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে দান করেছে সংস্থাটি।
এর আগে কংগ্রেসের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশির পরই ওই সব সংস্থা ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে অনুদান দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল দাবি করেন দু’টি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল, 'দ্য নিউজ মিনিট' এবং 'নিউজলন্ড্রি' -র আভ্যন্তরীণ তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে। পোর্টালগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী এভাবে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে বিজেপি।
কংগ্রেস নেতা আরও জানিয়েছিলেন, ২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত ইডি, সিবিআই এবং আয়কর দপ্তর প্রায় ৩০টি বেসরকারি কোম্পানিতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল। সেই সব কোম্পানিগুলি পরে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে ৩৩৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন