দেশবিরোধী- সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু, সেই অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সহ আদালতে চার্জশিট (হলফনামা) জমা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা- NIA। ফলে, বিনাবিচারে ২০১৮ সাল থেকে জেলবন্দী রয়েছেন এলগার পরিষদ মামলার অভিযুক্তেরা।
জানা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এলগার পরিষদ মামলায় আগামী তিন মাসের মধ্যে চার্জ গঠন করা হবে। যদিও, মামলার কেন্দ্রবিন্দু এখন অভিযুক্তদের অবস্থার দিকে চলে গিয়েছে।
এলগার পরিষদ মামলায় যে ১৬ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামী। যিনি গত বছর, বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন বেসরকারী হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।
অন্যদিকে, গুরুতর অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য জামিন পেয়েছেন তেলেগু কবি ভারাভারা রাও। এছাড়া, এই মামলায় একমাত্র সন্দেহভাজন সুধা ভরদ্বাজ, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জামিনে মুক্ত আছেন। বাকি ১৩ জন এখনও বিভিন্ন কারাগারে বন্দী।
ন্যাশনাল হেরাল্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA শুধুমাত্র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বিভিন্ন ধারায় ‘খসড়া চার্জশিট’ তৈরি করেছে। যদিও এখনও তা আদালতে পেশ হয়নি। তা পেশ হওয়ার পরেই, বিচার শুরু হবে।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। মহারাষ্ট্রের পুনেতে এলগার পরিষদ কনক্লেভে কবি ভারভারা রাও এবং অন্যান্য বক্তারা উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই উসকানিমূলক বক্তৃতাগুলির জেরেই তার পরের দিনই, ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০তম বার্ষিকীতে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল।
এরপর, ২০২০ সালের অক্টোবরে এলগার পরিষদ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইউএপিএ (UAPA) আইনে স্ট্যান স্বামীকে রাঁচী থেকে গ্রেফতার করে NIA। ৮৪ বছর বয়সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিনের আবেদন করে একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্ট্যান স্বামী। জেলে যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতেও আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, ২০২১ সালের ৫ জুলাই, মুম্বাইয়ের হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মারা যান স্ট্যান স্বামী। জানা যায়, পারকিনসন্স রোগসহ একাধিক রোগে ভুগছিলেন স্ট্যান স্বামী।
এ প্রসঙ্গে, স্ট্যান স্বামীর আইনজীবী বোম্বে হাইকোর্টকে জানান, হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার আগে দশ দিনেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল তাঁর মক্কেল স্ট্যান স্বামীকে।
এখন দেখা যাক- বাকিদের ১৩ জনের কি অবস্থা
২০১৮ সালের জুন মাসে এই মামলায় প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় সমাজকর্মী সুধীর ধাওয়ালে (Sudhir Dhawale)-কে। বর্তমানে তিনি তালোজা কারাগারে বন্দি। চলতি বছরের জুলাই মাসে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিশেষ NIA আদালত।
২০১৮ সালের জুন মাসে গ্রেপ্তার হন সমাজকর্মী রোনা উইলসন (Rona Wilson)। চলতি বছরের জুলাই মাসে তাঁরও জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিশেষ NIA আদালত। তবে, তাঁর বাবার মৃত্যুর পর এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ১৪ দিনের জন্য অস্থায়ী জামিন দিয়েছিল বিশেষ NIA আদালত। ১৪ দিনের মেয়াদ শেষে তিনি আত্মসমর্পণ করেন।
এছাড়া, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং (Lawyer Surendra Gadling), অধ্যাপক সোমা সেন (Professor Shoma Sen), মহেশ রাউত (Activist Mahesh Raut)-কে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। সকলে এখনও কারাগারের পিছনে রয়েছে।
২০১৮ সালের আগস্টে, এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় আইনজীবী অরুণ ফেরেরা (Arun Ferreira), ভার্নন গনসালভেস (Vernon Gonsalves)-কে। বর্তমানে দু’জনেই তালোজা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
২০১৮ সালের আগস্টে, সত্তর বছর বয়সী সমাজকর্মী গৌতম নভলাখা (Gautam Navlakha)-কে গ্রেপ্তার করে NIA। তখন থেকে তিনি তালোজা কারাগারে বন্দী ছিলেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে, তাকে আন্দা সেলে (উচ্চ নিরাপত্তা ব্যারাক) স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তখন থেকে তিনি নির্জন কারাগারে রয়েছেন।
২০২০ সালের এপ্রিলে, সমাজকর্মী আনন্দ তেলতুম্বে (Anand Teltumbde)-কে গ্রেপ্তার করে NIA। তখন থেকে তিনি তালোজা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
২০২০ সালের জুলাই মাসে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যানি বাবু (Hany Babu)-কে গ্রেপ্তার করে NIA। বর্তমানে তিনি তালোজা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, গায়ক সাগর গোর্খে (Sagar Gorkhe) ও রমেশ গাইচোর (Ramesh Gaichor)-কে গ্রেপ্তার করে NIA। দুজনেই বর্তমানে তালোজা কারাগারে বন্দী রয়েছেন৷
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর, কবির কলা মঞ্চের সদস্য জ্যোতি জগতাপ (Jyoti Jagtap)-কে মাওবাদী মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি মুম্বাইয়ের বাইকুল্লা মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন