কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সংস্থা এনএসএসও'র সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, কৃষকদের আয় ক্রমশ কমছে। গ্রামের জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাভাবিক। কিন্তু কৃষিনির্ভর পরিবার কমছে। অর্থাৎ চাষবাস ছেড়ে দিচ্ছে বিপুলসংখ্যক পরিবার। দেশের কৃষি কৃষক এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে এই জাতীয় নমুনা সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।
রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান। গত ছয় বছরে প্রতি মাসে কৃষকের আয় বেড়েছে মাত্র ১৩৭ টাকা। লোকসান বেড়েছে ৯১৮ টাকা। এব্যাপারে কৃষি মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রাজ্যের কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, বড় রিপোর্ট। আমরা খতিয়ে দেখা শুরু করেছি। বিভিন্ন বিষয় আছে। তবে এই রিপোর্ট দেখে ধারণা করা যায় যে, কৃষকের উপার্জনের প্রধান মাধ্যম আর চাষ নয়।
২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছে। কিন্তু রাজ্য ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চাষিদের আয় দ্বিগুণের বেশি করে ফেলেছে। ২০১০ সালে রাজ্যের কৃষকদের আয় ছিল বছরে ৯১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ২.৩৯ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, মাসিক আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা।
কিন্তু এনএসএসও-র সমীক্ষা রিপোর্ট অন্য কথা বলছে। অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কৃষক পরিবারের আয় কম হওয়ায় রাজ্যের কৃষি দফতরের কর্তারা আশ্চর্য হচ্ছেন না। সরকারি সূত্র মতে, পশ্চিমবঙ্গে মাথা পিছু জমির মালিকানা কম। পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যে জমির মালিকানা বেশি। গড় আয়ও অনেক বেশি।
যে পরিবার বছরে অন্তত ৪ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন করে এবং পরিবারের অন্তত একজন চাষের কাজে যুক্ত, তাঁরাই কৃষক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সরকারি সমীক্ষা বলছে, চাষাবাদ থেকে আয় কমে যাওয়ায় রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক পরিবারই অন্য কাজে বেশি মন দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, গত দু’বছরে লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে। ফলে ২০১৮-১৯-এর তুলনায় চাষিদের হাল আরও খারাপ হয়েছে কিনা, সেটা তর্কসপেক্ষ। কিন্তু ভালোও হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন