সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি উস্কানিমূলক পোস্ট করা নিয়ে সরাসরি অভিযোগ উঠল সংঘ পরিবারের দিকে। মঙ্গলবার (ভারতীয় সময়) মার্কিন সেনেটের সামনে এমনই অভিযোগ তুলেছেন ফেসবুকের প্রাক্তন কর্মী ফ্রান্সিস হাউজেন। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে যে, ফেসবুকে সবথেকে বেশি অশান্তি, ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উস্কানিমূলক বার্তা ছড়িয়েছে হিন্দি এবং বাংলা ভাষায়।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল এই ধরনের পোস্টদাতাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৪০ শতাংশই ভুয়ো। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ এবং তাদের শাখা সংগঠনের বিরুদ্ধে ভারতে ভোট মরশুমকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ উঠেছে।
প্রথমে আমেরিকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দ্বারস্থ হন ফ্রান্সিস হাউজেন। তাঁর হয়ে সেখানে গোপন নথি জমা দিয়েছে হুইসলব্লোয়ার এইড নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই রিপোর্টের কথা সোমবার মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিবিএস নিউজ প্রকাশ্যে এনেছে। আমেরিকা, ব্রাজিল, ভারতে ভোট মরশুমের ওপর ফেসবুক বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল বলে জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে।
ভারত সম্পর্কে যে রিপোর্ট পেশ হয়েছে সেখানে একটি পৃথক অধ্যায় রয়েছে ‘অ্যাডভার্সারিয়াল হার্মফুল নেটওয়ার্কস - ইন্ডিয়া কেস স্টাডি’। হাউজেন ফেসবুককে কাঠগড়ায় তুলে বলেছেন, হিংসা এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর কাজে নিজেদের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে দিয়েছে সংস্থাটি।
এই রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে আটটি বিষয়কে সামনে রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে চারটিই ভারতকে কেন্দ্র করে। নথিতে প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের হয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারী, পেজ, গ্রুপ থেকে নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ভোটের আগে-পরে রাজনৈতিক স্বার্থেই হিংসায় উস্কানি দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে ভারতের জন্য হিন্দি, বাংলা, তামিল এবং উর্দুতে যা পোস্ট করা হবে, তা যাচাই করার ব্যবস্থা আছে, যাকে বলা হয় ক্লাসিফায়ার।
তাতে দেখা গিয়েছে, মাত্র ০.২ শতাংশ পোস্টকে ‘হেট স্পিচ’ হিসাবে রিপোর্ট করেছে তারা। হিন্দি এবং বাংলা ভাষায় ক্লাসিফায়ার পাওয়া যায়নি বলে অভ্যন্তরীণ নথিতেই উল্লেখ করেছে মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা। হাউজেনের বক্তব্য, এই বয়ান থেকেই স্পষ্ট সংস্থার ঘোষিত নীতি অনুযায়ী এই ধরনের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তা করা হয়নি। এর আগেও ব্যবসায়িক কারণে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ফেসবুকের ডেটা অ্যানালিস্ট ছিলেন হাউজেন। ইস্তফা দিয়ে তিনি গোপন রিপোর্ট পাঠান মার্কিন সরকারের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগে। বলা হয়েছে, বহু প্ররোচনামূলক হেট স্পিচ অথবা অশান্তিমূলক পোস্ট নিয়ে এই সোশ্যাল মিডিয়া কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কারণ ভারতে তাদের ব্যবসা মার খাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পা রাখা ফেসবুক ব্যবসা বজায় রাখতেই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন