শেষ ১০ বছরে সাংবাদিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র আন্দোলন কর্মী সহ একাধিক জনকে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএ আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁদের সকলেই মূলত শাসকের বিভিন্ন কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা -
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই আইনের অধীনে গ্রেফতার হন সাংবাদিক সন্তোষ যাদব। তিনি ছত্তিশগড়ে শাসক বিরোধী খবর করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাওবাদী যোগের কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৭ সালে একই আইনে গ্রেফতার হতে হয় সাংবাদিক আসিফ সুলতানকে। বিচ্ছিন্নতাবাদী যোগের অভিযোগে গ্রেফতা হয়েছিলেন তিনি। তিনি কাশ্মীরে শাসক বিরোধী সাংবাদিকতা করছিলেন বলেও জানা যায়। একই অভিযোগে গ্রেফতার হন আরেক সাংবাদিক কামরান ইউসুফ।
২০১৮ সালে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় মাওবাদী যোগের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল মানবাধিকার কর্মী ও অধ্যাপক সোমা সেন, মানবাধিকার কর্মী সুধীর ধাওয়ালে, মহেশ রাউত, রোনা উইলসন এবং সুরেন্দ্র গাডলিং-কে। ওই বছরের আগস্ট মাসে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সাংবাদিক গৌতম নাওলাখা এবং অধ্যাপক তথা দলিত নেতা আনন্দ তেলতুম্বডেকে।
এছাড়া সিএএ বিরোধি আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখকেও দেশদ্রোহিতা আইনের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে আছেন আসামের কৃষক নেতা অখিল গোগোই (মাওবাদী যোগের অভিযোগ), ছাত্রনেতা উমর খালিদ, মানবাধিকার কর্মী দেবাঙ্গনা কালিথা, নাতাশা নারওয়াল, খালিদ সাইফি, সাফুরা জারগার, ছাত্র নেতা আসিফ ইকবাল তানহা, আম আদমি পার্টির বিধায়ক তাহির হুসেন, মানবাধিকার ইশরাত জাহান (এই সকলের বিরুদ্ধে দিল্লি দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়)।
এছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী যোগের অভিযোগে ২০২০ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাংবাদিক সিদ্দিকি কাপ্পান। তিনি হাথরসে হওয়া ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এছাড়া কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে প্রতিবেদন লেখা সাংবাদিক ইরফান মেহরাজ, ফাহাদ শাহ, মানান দার এবং সাংবাদিক মসরত জাহরাকে গ্রেফতার করা হয়। সকলের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের হয়।
২০২২ সালে মাওবাদী যোগের অভিযোগে গ্রেফতার হন সাংবাদিক রূপেশ কুমার সিং। ২০২১ সালে ত্রিপুরায় দাঙ্গাতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল চিত্র সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিং-কে।
২০২৩ সালে চীনের মদতে ভারত-বিরোধী প্রচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল নিউজ ক্লিকের এডিটর প্রবীর পুরকায়স্থকে। সম্প্রতি তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে এই ইউএপিএ আইন চালু হয়। সেই নিয়মানুযায়ী কোনও সংগঠন সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থাকলে বা ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ প্রচার হলে সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করতে পারতো কেন্দ্রীয় সরকার। আর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ডিজির অনুমতি নিয়ে সংগঠনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ছিল এনআইএ-র।
কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর এই আইন সংশোধন করে মোদী সরকার। সংশোধিত আইন অনুযায়ী শুধু সংগঠনই না যে কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তিতে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে সরকার। আর তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ডিজির কাছ থেকে অনুমতিও নিতে হবে না এনআইএ-কে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন