সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২। আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের এই দিনেই বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়ির সামনে নৃশংস ভাবে খুন হয়ে গেছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। আজ তাঁর ষষ্ঠ হত্যাবার্ষিকী। যদিও শুধু সাংবাদিক হিসেবে গৌরী লঙ্কেশকে বিশেষিত করা হলে কম বলা হয়। কারণ সমাজজীবনে মানবাধিকার, উগ্র হিন্দুত্ববাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইতে লঙ্কেশের অবদান বোধহয় আরও অনেক অনেক বেশি।
কন্নড় ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘গৌরী লঙ্কেশ পাত্রিক’ পত্রিকার সম্পাদক এবং কোমু কোমু সৌহার্দা বেদিকে (সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফোরাম) এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা, নকশালদের মূল ধারায় আনার লক্ষ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ডে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে দেওয়া চার্জশিট থেকে জানা গেছে গৌরী লঙ্কেশের হত্যার জন্য দায়ী হিন্দু চরমপন্থী সংগঠন সনাতন সংস্থা। গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ডের তদন্তকারী স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) এই ঘটনায় ৯,২৩৫ পাতার চার্জশিটে মোট ১৮ জনকে অভিযুক্ত করেছে। ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয় অমল কালে-র। এছাড়াও শ্যুটার পরশুরাম ওয়াঘমারেকে, অমিত দেগওয়েকর এবং সুজিত কুমারের নামও উঠে আসে। গৌরী লঙ্কেশ এবং বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ এম এম কালবুর্গিকে একই বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।
তদন্ত থেকে জানা যায়, শুধু গৌরী লঙ্কেশই নন, এই সংগঠনের হত্যার তালিকায় নাম ছিল এম এম কালবুর্গী, নরেন্দ্র দাভোলকর এবং সিপিআই নেতা গোবিন্দ পানসারেরও। নাম ছিলো গিরিশ কারনাডের। এই তালিকায় আরও নাম ছিলো রাজনীতিক সাহিত্যিক বিটি ললিতা নায়েক, বীরভদ্র চান্নামাল্লা এবং সি এস দ্বারকানাথ-এর। গৌরী লঙ্কেশকে মূলত তাঁর লেখা এবং বক্তৃতায় হিন্দুত্ববাদের তীব্র বিরোধিতা করার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এছাড়াও যাদের নাম ছিল তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কড়া সমালোচক।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১৮ সালের নভেম্বরে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হলেও এই বছরের জুনে গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ডের বিচারপর্ব শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। এই মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ এবং প্রায় এক হাজারের বেশি নথি বিচার প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এই মামলার বিচারের দাবি এখনও পর্যন্ত মানেনি কর্ণাটকের বর্তমান বিজেপি সরকার। কর্ণাটক কন্ট্রোল অফ অর্গানাইসইড ক্রাইম অ্যাক্ট (KCOCA) আগস্ট মাস থেকে প্রতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই মামলার বিচারের জন্য নির্ধারিত করেছে।
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ গৌরী লঙ্কেশের হত্যার আগে ২০১৩-র আগস্ট মাসে খুন করা হয় সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকরকে। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে খুন হয়ে যান বামপন্থী রাজনীতিবিদ গোবিন্দ পানসারে এবং ২০১৫-র আগস্ট মাসে হত্যা করা হয় এম এম কালবুর্গিকে। এই তিন হত্যাকান্ডেই আততায়ীরা নাকি মোটরবাইকে করে এসেছিলো এবং হেলমেটে তাদের মুখ ঢেকে রেখেছিলো। ঠিক একই কায়দায় ২০১৭র ৫ সেপ্টেম্বর নিজের বাড়ির সামনেই আততায়ীরা গুলি করে হত্যা করে গৌরী লঙ্কেশকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন