অবশেষে আগামী ২৭ মে বিশেষ আদালতে শুরু হতে চলেছে সাংবাদিক, সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশ হত্যার বিচার। প্রায় পাঁচ বছর আগে দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে তাঁর বাসভবনের বাইরে দুই মোটরসাইকেল আরোহী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন গৌরী লঙ্কেশ (৫৫)। কর্ণাটক কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইমস অ্যাক্ট (KCOCA), ২০০০ এর অধীনে এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলবে।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয় গৌরী লঙ্কেশকে। তিনি কন্নড় ম্যাগাজিন ‘গৌরী লঙ্কেশ পাত্রিক’-এর সম্পাদক এবং কোমু সৌহার্দা বেদিকে (সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফোরাম) এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। যে সংগঠন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার কাজ করে। তিনি নকশালদের মূলধারায় আনার লক্ষ্যে সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একটি কমিটিরও অংশ ছিলেন।
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। তৎকালীন রাজ্য সরকার এই মামলার তদন্তের জন্য আইপিএস অফিসার এম এন অনুচেথ এবং পি রাঙ্গাপ্পাকে নিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করে। এসআইটি ১০ মার্চ, ২০১৮-তে গৌরী হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে প্রথম গ্রেপ্তার করে হিন্দু যুব সেনার সদস্য নবীন কুমারকে।
৩০ মে নবীন কুমারের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ২৩ নভেম্বর, ২০১৮-তে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হয় এসআইটি প্রধান সিভিল এবং দায়রা আদালতে। এই চার্জশিটে ১৮ জন অভিযুক্তের নাম ছিল। এসআইটি জনৈক অমোল কালেকে ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে, পরশুরাম ওয়াঘমারেকে শ্যুটার হিসাবে এবং অমিত দেগওয়েকর এবং সুজিত কুমারের মতো অন্যদেরকে অস্ত্র তৈরি এবং আততায়ীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের প্ররোচিত করার জন্য দায়ী হিসাবে চিহ্নিত করে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, হিন্দু চরমপন্থী সংগঠন, সনাতন সংস্থা, গৌরী লঙ্কেশের হত্যার জন্য দায়ী। আরও জানানো হয়েছে, তাঁর হত্যাকাণ্ড অন্যান্য বামপন্থী কর্মী এবং যুক্তিবাদীদের হত্যার সাথে যুক্ত ছিল। যে তালিকায় ছিলেন অধ্যাপক এম এম কালবুর্গী, নরেন্দ্র দাভোলকর এবং গোবিন্দ পানসারে। গৌরী লঙ্কেশকে তাঁর লেখা এবং বক্তৃতায় হিন্দুত্ববাদের তীব্র বিরোধিতা করার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
যদিও এই মামলায় ১৮ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু হত্যা মামলার শুনানি শুরুতে দেরীর কারণে কাউকেই এখনও দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। বিশেষ আদালতের বিচারক অনিল ভীমান্না কাট্টি, নিহত সমাজ কর্মীর বোন কবিতা লঙ্কেশকে ২৭ মে, বিচার শুরুর সময় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য এবং তথ্যাদি পেশ করার জন্য সমন জারি করেছেন।
২২শে এপ্রিল, ২০২১-এ, কর্ণাটক হাইকোর্ট ১৪ অগাস্ট, ১০১৮, অভিযুক্তদের একজন মোহন নায়কের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য KCOCA আহ্বান করার অনুমোদন প্রদানকারী পুলিশ কর্তৃপক্ষের আদেশ বাতিল করে। তার বিরুদ্ধে গৌরী লঙ্কেশের খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার এবং একটি "সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেটের" গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
কবিতা লঙ্কেশ ১৯ জুলাই, ২০১৮-তে গ্রেপ্তার হওয়া মোহন নায়কের বিরুদ্ধে KCOCA-এর অধীনে অভিযোগ বাতিলের কর্ণাটক হাইকোর্ট-এর (HC) আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি ব্যক্তিগত পিটিশন দায়ের করেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে, শীর্ষ আদালত কর্ণাটক হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে অসম্মতি জানিয়ে বলে, এটি "স্পষ্টতই ভুল"। আরও উল্লেখ করা হয়, নায়েকের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার্জশিট বাতিল করার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট তার এক্তিয়ার অতিক্রম করেছে।
বিচারপতি এ এম খানউইলকর, দীনেশ মহেশ্বরী এবং সি টি রবিকুমারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে উল্লেখ করা হয়, SIT-এর তদন্তে জানা গেছে যে ১৮ জুলাই, ২০১৮-তে গ্রেফতার হওয়া নায়েকের “পুরো ঘটনার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। ঘটনায় অভিযুক্ত অমল কালে, মাস্টার অস্ত্র প্রশিক্ষক রাজেশ ডি. বাঙ্গেরা, যারা একটি অপরাধমূলক সিন্ডিকেটের অংশ এবং সংগঠিত অপরাধ করেছে”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন