বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরেও নিজেদের বাড়িতেই খাবার জোগাতে পারছেন না দেশের ফুড ডেলিভারি কোম্পানিগুলির কর্মচারীরা। ২০১৯ থেকে ২০২২, তিন বছরে ফুড ডেলিভারি কর্মচারীদের আয় কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। ঝড়-জল-বন্যা উপেক্ষা করে দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ করার পরেও দেশের ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও পেট্রোল-ডিজেলের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে রোজগারের একটা বড় অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছে রাজধানীর এক আর্থিক গবেষণা সংস্থা।
সোমবার দেশের ২৮টি শহরের ফুড ডেলিভারি কর্মীদের নিয়ে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লির সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক রিসার্চ (NCAER)। সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছে বর্তমানে ফুড ডেলিভারি কর্মীদের মাসিক আয়ের বিভিন্ন খতিয়ান।
সোশিও ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট অফ ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কার্স শীর্ষক সমীক্ষায় NCEAR ৯২৪ জন ফুড ডেলিভারি কর্মীর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। দেশের মোট ২৮টি শহরের ফুড ডেলিভারি কর্মীদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ফুড ডেলিভারি কর্মীদের ১০০ জনের মধ্যে ৩২ জনই গ্র্যাজুয়েট।
রিপোর্ট অনুসারে, দিনে ১১ ঘণ্টার শিফটে কাজ করা কর্মীদের আয় ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে প্রায় ১১ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যেখানে একজন ফুড ডেলিভারি কর্মীর মাসিক আয় ছিল ১৩,৪৭০ টাকা সেখানে ২০২২ সালে সেই মাসিক আয় কমে দাঁড়িয়েছে ১১,৯৬৩ টাকায়।
রিপোর্টে এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, “বেশি রোজগারের জন্য অনেকেই দীর্ঘ শিফটে (১১ ঘণ্টা) কাজ করেন। কিন্তু তাতেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তারা তাঁদের দৈনিক টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না।”
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ফুড ডেলিভারি কর্মীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই আগের কাজের তুলনায় বেশি আয় বা অতিরিক্ত রোজগারের জন্য ‘পার্টটাইম’ হিসেবে এই কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু দিনে ১১ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করার পরেও তাঁদের মাসিক গড় আয় মাত্র ২০,৭৪৪ টাকা। কেন্দ্রের ২০২১-২২ শ্রমিক সমীক্ষায় ফুড ডেলিভারি কর্মীদের গড় আয় ২২ হাজারেরও বেশি বলা হয়েছিল।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফুড ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ দীর্ঘদিন বসে থাকার পর এই কাজে যোগ দিয়েছেন। কর্মীদের মধ্যে ৯ শতাংশ আবার আগের কাজ হারিয়ে এই কাজ শুরু করেছেন। ২৪ শতাংশ কর্মী অবশ্য জীবনের প্রথম কাজ হিসেবে এই খাদ্য সরবরাহকেই বেছে নিয়েছেন।
এই নিয়ে NCAER-এর গবেষক তথা অধ্যাপিকা বর্ণালি ভাণ্ডারী জানিয়েছেন, “সমীক্ষায় আমরা দেখতে পেয়েছি ফুড ডেলিভারি কর্মীদের অধিকাংশের দুর্ঘটনা বিমা রয়েছে অথচ কোনওরকম স্বাস্থ্য বিমা নেই। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ কর্মীর কাছে।
তাঁর আরও বক্তব্য, “বেসরকারী কর্মচারীদের সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হলেও ফুড ডেলিভারি কর্মীদের ক্ষেত্রে তা হয় না। তাঁদের নিয়োগ হয় কাজের হিসেবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন