ভারতে বর্তমানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গিগ শ্রমিকদের সংখ্যা। যদিও সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটলেও এই শ্রমিকদের নেই কোনও সামাজিক সুরক্ষা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, অ্যাপ ভিত্তিক ক্যাব চালক থেকে গিগ শ্রমিকদের প্রতিদিন কাজ করতে হয় ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি। যাদের প্রায় ৪৫ শতাংশের দৈনিক রোজগার ৫০০ টাকারও কম। দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে একথা জানানো হয়েছে।
ওই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে অ্যাপ ভিত্তিক ডেলিভারি কর্মীদের ৩৪ শতাংশের বেশি কর্মী মাসে ১০ হাজার টাকার কম রোজগার করেন। যদিও তাদের ৭৮ শতাংশকেই প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। এছাড়াও তাদের সামাজিক সুরক্ষাও নেই। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে ৭৬ শতাংশ ডেলিভারি কর্মীরা তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
অন্যদিকে অ্যাপ ভিত্তিক ক্যাব চালকদের ৮০ শতাংশই জানিয়েছেন কোম্পানি তাদের যে কমিশন দেয় তাতে ক্ষুব্ধ। এদের অনেকেই জানিয়েছেন কোম্পানি তাদের কাছ থেকে প্রতি যাত্রায় কমিশন বাবদ ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ কেটে নেয়। যদিও তারা দাবি করে মাত্র ২০ শতাংশ কমিশন নেবার। অ্যাপ ভিত্তিক ক্যাব চালকদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ দৈনিক ১০ ঘণ্টা গাড়ি চালান। ৬০ শতাংশ গাড়ি চালান ১২ ঘণ্টা এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ গাড়ি চালান প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা।
এই সমীক্ষায় দিল্লি, হায়দারাবাদ, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, লখনোউ, কলকাতা, জয়পুর এবং ইন্দোরের ৫৩০২ জন ক্যাব চালক এবং ৫০২৮জন ডেলিভারি শ্রমিকের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। সমীক্ষা পত্রে মোট প্রশ্ন ছিল ৫০টি। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর।
সমীক্ষায় ডেলিভারি কর্মীরা জানিয়েছেন, একাধিক সংস্থার ’১০ মিনিটে জিনিস সরবরাহ’-র প্রতিশ্রুতি মেটাতে কর্মীদের ঝুঁকি নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কর্মীদের ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন এভাবে ১০ মিনিটের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা কার্যত অসম্ভব।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুসারে, এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পিপলস অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রাসরুট অ্যাকশন অ্যান্ড মুভমেন্টস এবং ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ অ্যাপ বেসড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স। এই সমীক্ষায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েহে ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভানিয়া এবং জার্মান সংস্থা ফ্রেডরিখ এবারট শ্তিফাং।
দেশের ৮টি রাজ্যের প্রায় ১০ হাজার গিগ শ্রমিক, ক্যাব ড্রাইভারদের ওপর সমীক্ষা করে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে এই সমীক্ষায় সামাজিক বৈষম্যের ভয়ংকর ছবিও উঠে এসেছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত শ্রমিকরা জানিয়েছেন তাদের কখনও কখনও দিনে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
ভারতে বিগত কয়েক বছরে লাফিয়ে বেড়েছে গিগ শ্রমিকদের সংখ্যা, স্ট্যাটিস্টা ডট কমের তথ্য অনুসারে ২০১২ সালে ভারতে এই ধরণের শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২.৫২ মিলিয়ন। যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৮ মিলিয়নে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। শেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে ভারতে গিগ শ্রমিকদের সংখ্যা ৭.৭ মিলিয়ন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নীতি আয়োগ ‘ইন্ডিয়াস বুমিং গিগ অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ইকনমি’ রিপোর্টে জানিয়েছিল ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে গিগ শ্রমিকদের সংখ্যায় প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন