হরিদ্বারের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠায় অবশেষে চারদিন পরে এফআইআর দায়ের করলো পুলিশ। হরিদ্বারে আয়োজিত একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে মুসলিম গণহত্যার ডাক দিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী নেতৃত্ব। গত চারদিন ধরে এই সমাবেশের বক্তাদের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হওয়ার পর গতরাতে এফআইআর দায়ের করেছে হরিদ্বার পুলিশ। তবে এফআইআরে মাত্র একজনের নাম রয়েছে, যিনি সম্প্রতি মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন।
গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে 'ধর্ম সংসদ'-এর আয়োজন করেছিলেন একাধিক হিন্দুত্ববাদী নেতা। সমাবেশ থেকে সমস্ত হিন্দু জাতিকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে 'সাফাই অভিযান' শুরু করার আহ্বান জানানো হয় হিন্দু নেতৃত্বের পক্ষে। যে ঘটনা দেশের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। আন্তর্জাতিক টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন।
চারদিন কেটে গেলেও কেন এফআইআর দায়ের হয়নি, এই প্রশ্ন উঠতেই হরিদ্বার পুলিশের তরফ থেকে প্রথমে দাবি করা হয় কোনও অভিযোগ না থাকায় এফআইআর দায়ের হয়নি। আরটিআই কর্মী সাকেত গোখলের অভিযোগের পর কোতোয়ালি হরিদ্বার থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। এফআইআরে বলা হয়েছে, "ওয়াসিম রিজভি ওরফে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী এবং অন্যান্যরা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবমাননাকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।" ওয়াসিম রিজভি আগে উত্তরপ্রদেশ শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত হওয়া ধর্ম সংসদে হিন্দু রক্ষা সেনা সংগঠনের সভাপতি স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি বলেন, এখানকার প্রত্যেক হিন্দু, রাজনীতিবিদ, পুলিশকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাফাই অভিযান শুরু করতে হবে।
প্রবোধানন্দ এর আগেও একাধিকবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামীর ঘনিষ্ঠ প্রবোধানন্দ।
ধর্ম সংসদের অপর এক আয়োজক যতি নরসিংহনন্দ বিশ্বজুড়ে সমস্ত জিহাদিদের হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন। হিন্দু জাতিকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বলেছেন তিনি।
অপর একটি ভিডিওতে স্বামী ধরমরাজ মহারাজকে বলতে দেখা গেছে, "প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন সংসদে বলেছিলেন জাতীয় সম্পদের ওপর সংখ্যালঘুদের প্রথম অধিকার, আমি যদি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম তাঁকে গুলি করে হত্যা করতাম। রিভলবারের ছ'টা গুলিই তাঁর বুকে ঢুকিয়ে দিতাম। আমাদের প্রত্যেকের নাথুরাম গডসে হওয়া উচিত।"
গত শুক্রবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওগুলো ব্যাপকহারে শেয়ার হলেও বক্তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। প্রবোধানন্দ এবং যতি নরসিংহনন্দ উভয়ই পৃথক পৃথকভাবে একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের মন্তব্যে লজ্জিত নন। পুলিশ বা আইনকে ভয় পাননা তাঁরা।
এই অনুষ্ঠানে একাধিক বিজেপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন, যেমন অশ্বিনী উপাধ্যায়, বিজেপির মহিলা মোর্চা প্রধান উদিতা ত্যাগী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন