“অন্ধকারতম সময়েও আনন্দ পাওয়া যায় যদি কেউ আলো জ্বালানোর কথা মনে রাখে” - হ্যারি পটার চলচ্চিত্রের এই বিখ্যাত উক্তি যেন ফিরে এল হরিয়ানার দাঙ্গা বিধ্বস্ত নুহ জেলায় বাস্তব জীবনের উদাহরণে।
সম্প্রীতির উদাহরণ স্থাপন করে, মারোরা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এখন নুহ জেলার একটি মন্দির এবং গোশালা পাহারা দিচ্ছে। গত ৩১ জুলাই এই মন্দির সাম্প্রদায়িক হিংসার সাক্ষী হয়েছিল।
এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০-৪০ জন যুবক প্রতিদিন রাত ১০ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত ওই মন্দির ও একটি গোশালা পাহারা দিয়ে চলেছে।
মারোরা গ্রামের সরপঞ্চ ১ আগস্ট (নুহতে সাম্প্রদায়িক হিংসা শুরু হওয়ার একদিন পরে) এক সভা করে এলাকার যুবক এবং বয়স্ক মানুষদের কাছে মন্দিরটিকে সুরক্ষিত রাখার আবেদন জানান। এরপর থেকেই ওই মন্দির এবং গোশালায় চলছে পাহারা। সরপঞ্চের নির্দেশে আপাতত গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
ওই গ্রামের সরপঞ্চ মুস্তাক খান আইএএনএসকে জানান, “নুহ শহরে যা ঘটেছিল তা আমাদের গ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ওপর কোনও প্রভাব ফেলেনি। এই গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন এবং সাড়ে ৩ হাজার ভোটার আছে।”
তিনি আরও বলেন, নুহতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের একদিন পর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। আমি তৎক্ষণাৎ ‘ছত্তিশ বিরাদরি’ (৩৬ সম্প্রদায়)-এর সভা ডেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সকলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে সমস্ত কিছু ঠিক না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের মন্দির এবং গোশালা পাহারা দিতে হবে। আমরা আমাদের গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলাম যাতে কেউ বাইরে থেকে এসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে না পারে বা কোনো ধরনের উপদ্রব সৃষ্টি করতে না পারে।
ওই মিটিং থেকেই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ থেকে ৪০ জন যুবক প্রতিদিন রাত ১০ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্রাম পাহারা দেবে। আমরা জনগণকে 'থিকরি পেহরা' সংগঠিত করতে বলেছি, যাতে কোনও বহিরাগত এখানকার সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে না পারে।
খান বলেন, “মানুষ নুহ সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা তৈরি করছে। আমরা বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি”। পুলিশ এই গ্রামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের জেলে পাঠানো হয়েছে।
মহর্ষি দয়ানন্দ আরশ মন্দির এবং গোশালার তত্বাবধায়ক ও পুরোহিত বেদ প্রকাশ নিশ্চিত করেছেন যে সংখ্যালঘু যুবকরা গত ১ আগস্ট থেকে মন্দিরটি নিয়মিত পাহারা দিচ্ছে।
বেদ প্রকাশ আরও বলেন, “নুহতে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসীরা যুবকদের মন্দির পাহারা দিতে বলে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রামবাসীরা বাইরের কাউকে মন্দিরের কাছে আসতে দেয়নি।”
পুলিশের এক মুখপাত্রও নিশ্চিত করেছেন যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবকরা নুহ জেলার ওই মন্দির পাহারা দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, “আমরা অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দাদেরও তাদের প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখতে বলেছি, বিশেষ করে যদি তাঁরা অন্য সম্প্রদায়ের হয়। গ্রামের সরপঞ্চরা সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"
এদিকে, নুহের পুলিশ সুপার নরেন্দ্র বিজার্নিয়া জানান, ব্রজ মন্ডল যাত্রার সময় নুহতে যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছিল তার সাথে জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, “আমরা আগেই ঘোষণা করেছিলাম যে যারা নিরপরাধ তাদের পুলিশকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। পুলিশ শুধুমাত্র দোষীদেরই গ্রেফতার করবে। এখন পর্যন্ত, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আটটি দল গঠন করা হয়েছে এবং তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে যুক্ত এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। তিনজন ডিএসপির নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে।
বিরজানিয়া জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত, নুহ-র ঘটনায় ৬০ টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং ২৬৪ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশ কর্মী সহ মোট ৮৮ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সকাল ৬ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত কারফিউ-এর সময় শিথিল করেছে। জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, ১,৯০০ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়মিত ফ্ল্যাগ মার্চ করা হচ্ছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন