ব্যাপক তুষারপাত এবং চরম ঠান্ডা জলবায়ুতেও হিমাচল প্রদেশের দুর্গম অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচনের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যের নির্বাচনী আধিকারিকরা। আগামী শনিবার ১২ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশের ৬৮ আসনের জন্য নির্বাচন। প্রচন্ড ঠান্ডা থাকা সত্ত্বেও ভোটাররা রেকর্ড হারে ভোটদানে অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
নির্বাচনী আধিকারিকরা আইএএনএসকে জানিয়েছেন যে লাহৌল-স্পিতি জেলার ৩১,৫৩৮ জন অধিবাসীর জন্য ৯২টি ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। যেখানে বুধবার সারারাত ব্যাপক তুষারপাত হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মোট বুথের সংখ্যা ৭,৮৮১।
জেলার ভোটকেন্দ্রগুলি হিমালয় পর্বতমালা, সংলগ্ন তিব্বত প্রান্ত অঞ্চল, রুক্ষ ভূখণ্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেসব অঞ্চলে ভোট কর্মীদের পৌঁছানোর জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা দুর্গম পথে হাঁটতে হবে।
রাজ্য নির্বাচন বিভাগের বিশেষ দায়িত্বে থাকা অফিসার নীরজ কুমার সিমলায় আইএএনএসকে জানিয়েছেন, "নির্বাচন সামগ্রী ইতিমধ্যেই প্রত্যন্ত কেন্দ্রগুলি সহ রাজ্য জুড়ে সমস্ত ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।” তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে শুক্রবারের মধ্যে দূর-দূরান্তের ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মীরা পৌঁছে যাবেন।
তাঁর দাবি অনুসারে, "আমাদের নির্বাচনী কর্মীরা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত। ভোটাররাও তাই। এবার আমরা রেকর্ড ৮০ শতাংশের বেশি ভোট দেখব।"
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, রেকর্ড ৭৫.৫৭ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছে, যা গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সময়েও কংগ্রেস ও বিজেপি সরাসরি লড়াইয়ে ছিল।
প্রত্যন্ত কিন্নর, চাম্বা এবং লাহৌল-স্পিতি জেলার নির্বাচকমণ্ডলী, রাজ্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত মান্ডি সংসদীয় আসনের অংশের স্বাধীন ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান রয়েছে। কারণ ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের জন্য দেশের বাকি অংশের থেকে কয়েক মাস আগে তারাই প্রথম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। তুষারপাত যাতে উপজাতিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করে তা নিশ্চিত করার জন্য এটি করা হয়েছিল।
লাহৌল উপত্যকার থোলাং গ্রামের অষ্টবয়সী তাশি তেনজিং বলেছিলেন, "১৯৯০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত কোন সঠিক রাস্তা ছিল না। সেইসময় ঘোড়ার পিঠে করে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া হত।"
কিন্নরের নাকো গ্রামের স্কুল শিক্ষক গিয়ান বোধ জানিয়েছেন: "আমার ঠাকুরদা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিকটবর্তী ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য খুব কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে গেছিলেন। এখন আমাদের গ্রামেই ভোটকেন্দ্র হয়েছে।"
রাজ্য নির্বাচন বিভাগের তথ্য অনুসারে, শ্যাম শরণ নেগি, ১০৬, স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোটার যিনি ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর কিন্নরের কালপা গ্রামের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনের জন্য তাঁর ৩৪ তম ভোট দেওয়ার মাত্র তিন দিন পরে, তিনি তার জন্মস্থানে গত ৫ নভেম্বর মারা যান।
প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা মনীশ গর্গ জানিয়েছেন, কিন্নর জেলাতেই রাজ্যের সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে একটি ভোটকেন্দ্র আছে। "ইয়াংথাংয়ের কাছে কাএ ভোট কেন্দ্রে মাত্র ছয় ভোটার আছেন - যা রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন।"
স্পিতি উপত্যকায় ১৫,২৫৬ ফুটে অবস্থিত তাশিগাং-এর এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশীতিপর দুর্গা নেগি জানিয়েছেন: "আগে আমরা ভোট দেওয়ার জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতাম। এখন ভাল রাস্তা তৈরি হওয়ায় ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানো সহজ হয়েছে।”
ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত, তাশিগাং-এর ভোট কেন্দ্রটি তাশিগাং এবং গেটে গ্রামের ৫২ জন ভোটারের জন্য করা হয়েছে।
৪,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ভারমৌর বিধানসভার চাস্ক ভাটোরি গ্রামে হিমাচল প্রদেশের সর্বোচ্চ ভোট কেন্দ্র। ভোট কর্মীদের এই বুথে পৌঁছানোর জন্য ১৪ কিলোমিটার কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।
গর্গ বলেন, পাঙ্গি আদিবাসী এলাকার সেচু পঞ্চায়েতের ৪,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চাস্ক ভাটোরিতে ২৬ জন ভোটদাতা আছেন।
এবার হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বিভাগ ৭,৮৮১টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
কাংড়া জেলার শেষ গ্রাম থেকে ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত বড় ভাঙ্গালের জন্য ভোটের উপাদানগুলি বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
৪,৭০০ মিটার উচ্চতায় বড় ভাঙ্গাল, থামসার গিরিপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। এখানে প্রায় ৪৭০ জন ভোটার আছেন। তাদের বেশিরভাগই শীতকালে রাজ্যের রাজধানী সিমলা থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে পালমপুর শহরের কাছে বীরে চলে যায়। নির্বাচন কমিশন বড় ভাঙ্গালে ১০০ ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করেছে।
রাজ্যের বৃহত্তম জেলা কাংড়ায় ১,৬২৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে লাহৌল-স্পিতি জেলায় সর্বনিম্ন ৯২টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এবারের হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে গ্রামীণ এলাকায় ৭,২৩৫টি এবং শহরাঞ্চলে ৬৪৬টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে বলে এক সরকারী বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের জন্য, তিনটি সহায়ক ভোটকেন্দ্র - সিধবাড়ি (ধর্মশালা), বড় ভাঙ্গাল (বৈজনাথ) এবং ধিলোন (কাসাউলি) স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রত্যন্ত জেলা চাম্বা, ডালহৌসির মানোলা ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১,৪৫৯ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে ভারমৌরে মাত্র ৮৪ জন ভোটার আছেন।
১৫টি নির্বাচনী এলাকা নিয়ে কাংড়ার সিধাবাড়িতে সর্বাধিক ১,৫১১ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে সর্বনিম্ন ভোটকেন্দ্র নুরপুরের কলাঙ্গনে ৭৫ জন ভোটার রয়েছেন। জেলার প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্র হল শাহপুর আসনের মঞ্চ, যেখানে ভোটদানকারী দলকে ৭ কিমি হেঁটে যেতে হবে।
আরেকটি প্রত্যন্ত জেলা, লাহৌল-স্পিতির কাজায় ৮১১ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে লিঙ্গারে মাত্র ৩৮ জন ভোটার রয়েছেন।
কুল্লু জেলায়, মানালি চিচোঙ্গা কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ১,৩০৫ জন, যেখানে বাঞ্জারের ভোটকেন্দ্র টিলগায় সবচেয়ে কম ৮৯ জন ভোটার রয়েছেন। বানজার বিধানসভার শক্তি ভোটকেন্দ্রের জন্য, ভোটগ্রহণকারী দলগুলিকে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে৷
১০টি বিধানসভা আসন সহ দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা মান্ডি। এখানে সুন্দরনগর নির্বাচনী এলাকার অধীন চৌগান ভোট কেন্দ্রে সর্বাধিক ১,৪০৩ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে জরাথু ভোট কেন্দ্রে সর্বনিম্ন ৯৫ জন ভোটার রয়েছেন৷
জেলার প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্র মানঝগান, যেখানে ভোটকর্মীদের পৌঁছতে হবে ১০ কিমি হেঁটে।
হামিরপুর নির্বাচনী এলাকায় সোহাল ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১,২৮৩ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে বারসার নির্বাচনী এলাকায় বাল ধাতওয়ালিয়ান ভোটকেন্দ্রে সর্বনিম্ন ১০৫ জন ভোটার রয়েছেন।
আটটি বিধানসভা কেন্দ্রের সমন্বয়ে, সিমলা জেলার চপল বিধানসভার চারোলি ভোটকেন্দ্রে সর্বাধিক ১,২৯৮ জন ভোটার রয়েছেন, যেখানে শুধুমাত্র সিমলা (আরবান) নির্বাচনী এলাকার অধীনে সামারহিল ভোটকেন্দ্রে সর্বনিম্ন ৩৩ জন ভোটার রয়েছেন। রোহরু নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত ভোটকেন্দ্র পান্ডারে পৌঁছতে ভোট কর্মীদের ৭ কিমি হেঁটে যেতে হবে।
মোট ৫৫,৯২,৮২৮ জন নির্বাচক, যার মধ্যে ৬৭,৫৫৯ জন পরিষেবা নির্বাচক (Service Voter) এবং ২২ জন অনাবাসী ভারতীয় (NRI), তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের যোগ্য৷ ৮ ডিসেম্বর হিমাচল প্রদেশের ভোটগণনা করা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন