গত পাঁচ দশকের মধ্যে চলতি অর্থবর্ষে সবচেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে দেশের পারিবারিক আর্থিক সঞ্চয়ের শতকরা হার। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র তথ্যকে তুলে ধরে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদপত্র ‘দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে'।
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, অর্থবর্ষ ’২৩-এ পারিবারিক আর্থিক সঞ্চয়ের হার ভারতের বার্ষিক জিডিপির মাত্র ৫.১ শতাংশ। গতবছর অর্থাৎ অর্থবর্ষ ’২২-এ এই হার ছিল জিডিপির ৭.২ শতাংশ। অর্থাৎ একবছরের মধ্যেই পারিবারিক সঞ্চয়ের হার কমেছে প্রায় ২.১ শতাংশ। ফলে সংসার চালাতে ঋণ নেওয়ার চাহিদাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবর্ষে বার্ষিক পারিবারিক আর্থিক দায় বেড়ে হয়েছে ৫.৮ শতাংশ। গত অর্থবর্ষে (FY২২) এই হার ছিল জিডিপির ৩.৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে ঊর্ধ্বগামীতা প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ তাঁদের নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদা মেটানোর জন্য ‘ধার’ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
রিপোর্ট আরও জানাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে যে পরিমাণে পারিবারিক আর্থিক দায় বেড়েছে তা ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অর্থবর্ষ ’০৭-এ এই হার ছিল সবচেয়ে বেশি, ৬.৭ শতাংশ। আরও পরিস্কারভাবে বলতে গেলে, অর্থবর্ষ ’২১-এ দেশের পারিবারিক সঞ্চয়ের মোট পরিমাণ ছিল ২২.৮ ট্রিলিয়ন। অর্থবর্ষ ’২২-এ সেটা কমে দাঁড়ায় ১৬.৯৬ ট্রিলিয়নে। পরবর্তীতে অর্থবর্ষ ’২৩-এ সেই সংখ্যাটা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৭৬ ট্রিলিয়ন। উল্লেখ্য, বার্ষিক সঞ্চয়ের পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পারিবারিক দেনার শতকরা হারও। চলতি অর্থবর্ষে দেশের জিডিপিতে পারিবারিক ঋণের শতকরা হার সামান্য বেড়ে হয়েছে ৩৭.৬ শতাংশ, যেখানে গত অর্থবর্ষে এই হার ছিল ৩৬.৯ শতাংশ।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দেশে এত উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরেও গত ৮ বছরে সর্বভারতীয় স্তরে কর্মচারীদের মজুরিতে বিশেষ একটা হেরফের হয়নি। সবচেয়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখেছে দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্র। চিকিৎসা ও শিক্ষায় ব্যাপকভাবে বেসরকারিকরণের ফলে খরচও ব্যাপক হারে বেড়েছে। তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ভারতের চিকিৎসাক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। সমস্ত এশীয় দেশের মধ্যে ভারতের চিকিৎসাক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতির হারই সবচেয়ে বেশি ছিল। এমনকি শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে চিকিৎসার খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রেও মুদ্রাস্ফীতির হার আকাশছোঁয়া (প্রায় ১১-১২ শতাংশ)।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন