গত বছর এই জুন মাসেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল ওড়িশার বালাশোর। দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ৯০০ জনেরও বেশি যাত্রী। সেই ঘটনার এক বছর পেরোতে না পেরোতে ফের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। এবার ঘটনাস্থল জলপাইগুড়ির ফাঁসিদেওয়া। শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় এক্সপ্রেসের দুটি কামরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৬০ জন।
গত এক বছরে এই সময়কালের মধ্যে আরও একাধিক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১২ অক্টোবর বিহারের বক্সারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দিল্লি-কামাখ্যা নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস। ২১ টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে যায়। কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন প্রায় ৭০ জন।
৩০ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ানগরমে সিগন্যাল না পাওয়ার কারণে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে ধাক্কা মারে ভাইজাগ-রায়গড় প্যাসেঞ্জার ট্রেন। কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়।
পরপর রেল দুর্ঘটনার কারণে জোরালো হচ্ছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগের দাবি, যিনি মোদীর তৃতীয় মেয়াদেও রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে রেল দুর্ঘটনার পর নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন একাধিক রেলমন্ত্রী। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কারা কারা পদত্যাগ করেছেন –
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী: স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি নৈতিক দায় স্বীকার করে মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ১৩ মে থেকে ১৯৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরতে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়। তাতে ১৪২ জন প্রাণ হারান। সেই দুর্ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন শাস্ত্রী। তাঁর এই পদক্ষেপ সেই সময় প্রশংসা কুড়িয়েছিল। পরবর্তীকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শাস্ত্রী।
নীতিশ কুমার: শাস্ত্রীর পদত্যাগের ৪৩ বছর পর দেশের ২৮ তম রেলমন্ত্রী হিসেবে নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন নীতিশ কুমার। ১৯৮৮ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৯৯৯ সালের ৫ আগস্ট মাস পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তখন নীতিশ কুমার সমতা পার্টিতে ছিলেন। ১৯৯৯ সালের আগস্টে আসামের গাইসালে ট্রেন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৯০ জন নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে ইস্তফা দিয়েছিলেন বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা ব্যানার্জি: এর এক বছর পর ২০০০ সালে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন মমতা ব্যানার্জি। এক বছরে দু’টি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। যদিও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁর পদত্যাগ পত্র প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সুরেশ প্রভু: নরেন্দ্র মোদীর প্রথম মেয়াদে দেশের ৪৩তম রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরেশ প্রভু। তাঁর আমলে একাধিক রেল দুর্ঘটনা হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে, কানপুরের কাছে পাটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে প্রায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়। এরপর মুজাফফরনগরে উৎকল এক্সপ্রেসের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে ২২ জন প্রাণ হারান এবং ১৫৬ জন আহত হন। এরপরে উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়ার কাছে কাইফিয়াত এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আহত হন ৬০ জন। পরপর একাধিক দুর্ঘটনায় নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন সুরেশ প্রভু।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন