পাঁচ বছরে রাজ্যের ১৯ নেতা-মন্ত্রী বিপুল সম্পদের মালিক, আদালতে তালিকা পেশ, কার কত বাড়লো?

কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে আর্জি জানিয়ে আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, তৃণমূলের ১৯ নেতা-মন্ত্রীর তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ২০১১ থেকে ১৬ পর্যন্ত সম্পত্তি বিপুল বেড়েছে।
পাঁচ বছরে রাজ্যের ১৯ নেতা-মন্ত্রী বিপুল সম্পদের মালিক, আদালতে তালিকা পেশ, কার কত বাড়লো?
গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রীসভার সদস্য হন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা। ক্ষমতার অলিন্দে ফিরেই জেলায় জেলায় দাপট বাড়ে তৃণমূল নেতাদের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ।

ক্ষমতায় ফিরে প্রথম পাঁচ বছরেই কত শতাংশ সম্পত্তির পরিমাণ বাড়িয়েছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা? এ নিয়ে কৌতূহল থাকলেও, জানতে পারেননি সাধারণ মানুষ। প্রবল দাপটের জেরে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছে বাংলার মানুষের।

কিন্তু, না। সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা জানেন, শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি দেখলে তা নিয়ে তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়। সেই সচেতনতা থেকে ২০১৭ সালে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন সমাজসেবী বিপ্লব কুমার চৌধুরী।

সেই মামলার সূত্রেই কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে আর্জি জানান আইনজীবী শামিম আহমেদ। তৃণমূলের ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব তুলে ধরে আদালতে শামিম বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। পাঁচ বছরে এঁদের সম্পত্তি কী ভাবে এত বাড়ল, তা খতিয়ে দেখুক ইডি (ED)। এর প্রেক্ষিতে ওই মামলায় ইডি-কে পার্টি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

সম্প্রতি, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা ও শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির নথিপত্র উদ্ধার করে ইডি (ED)। রাজ্যের মানুষ জানতে পারেন কোথা থেকে, কিভাবে উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। এই কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইডি। তদন্ত চলছে- উদ্ধারকৃত বিপুল এই অর্থের উৎস কী ? কারাই বা জড়িত এই আর্থিক দুর্নীতিতে?

আদালতে পেশ করা নথি অনুসারে বিধানসভার স্পিকারসহ তৃণমূল সরকারের ৭ জন মন্ত্রীর সম্পত্তি নিয়ে তদন্তে নামতে চলেছে ইডি। শুধু তাই নয়- এই তালিকায় আছে তৃণমূলের এক সাংসদ, কয়েকজন বর্তমান এবং প্রাক্তন বিধায়কের নামও।

এরমধ্যে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত (৫ বছরে) রাজ্যের পৌর-নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম-এর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রীর আয় বেড়েছে ৩৮০ শতাংশ আর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২২৫ শতাংশ।

একই সময়কালে রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু'র অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১০৩ শতাংশ। একইসঙ্গে, তাঁর স্ত্রীর আয় বেড়েছে ৩৮২ শতাংশ এবং অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৬০০ শতাংশ।

রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১৫২ শতাংশ। অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয়ের স্ত্রী কোনও পেশার সঙ্গে সেভাবে যুক্ত না হলেও তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি ৭২৯ শতাংশ বেড়েছে।

আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক-এর আয় বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। তবে, তাঁর স্ত্রীর আয় বেড়েছে ২০৭ শতাংশ এবং অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ১১৩ শতাংশ।

বর্তমানে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী হলেন অরূপ রায়। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১১০৮ শতাংশ। শুধু তাই নয়, আয়ও বেড়েছে ১৭৭ শতাংশ।

দুর্যোগ মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৪৭৩৪ শতাংশ। একইসঙ্গে, তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৪০৮ শতাংশ বেড়েছে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা। তাঁর আয় বেড়েছে ১৭৪ শতাংশ। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ১৯২ শতাংশ।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার হলেন বিমান ব্যানার্জি। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন তিনি। বিধানসভার স্পিকার মনোনীত হন। এরপর পাঁচ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ে ২৬৭ শতাংশ।

এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন - অমিত মিত্র, সাধন পাণ্ডে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গৌতম দেব, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত, ইকবাল আহমেদ, স্বর্ণকমল সাহা, অর্জুন সিং এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in