আইসিএআই-এর সভায় চরম লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী থাকলো কলকাতা। আইসিএআই আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ সিএ স্টুডেন্টস শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক স্বামীজীর দাবি মেনে প্রেক্ষাগৃহের প্রথম পাঁচটি সারি থেকে মহিলা সদস্য এবং মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল শুরু হয়েছে। সমাজ মাধ্যমেও চলছে কড়া সমালোচনা। গত ২২-২৩ জুন কলকাতায় দ্য ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI)-এর এক অনুষ্ঠানকে ঘিরে এই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩,৬০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
আইসিএআই-এর ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা ছাড়াও মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএপিএস স্বামীনারায়ণ মন্দিরের স্বামী জ্ঞানবাৎসল্য। যদিও মঞ্চে বক্তৃতা করতে ওঠার আগে স্বামী জ্ঞানবাৎসল্য দাবি করেন, কোনও মহিলা প্রেক্ষাগৃহের প্রথম পাঁচটি সারিতে বসতে পারবেন না এবং তাঁর এই দাবি মানা না হলে তিনি অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবেন।
দ্য ফিনান্স স্টোরির প্রতিবেদন অনুসারে, স্বামীজীর এই দাবির পরে আইসিএআই কমিটির এক সদস্য মাইক হাতে নিয়ে বলেন, মহিলা সদস্য, মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা তাড়াতাড়ি করে পেছনের দিকে চলে যান। স্বামীজী মঞ্চে আসছেন। এই ঘোষণার পরেই মহিলারা উঠে যান।
এই ঘটনার পরেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। যদিও ওই প্রতিবেদন অনুসারে এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি আইসিএআই। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ওইদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের দিক থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ধর্মীয় সংস্থার একজন ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূলক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে নির্বাচন করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
কলকাতার এই ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। এক এক্স বার্তায় সিপিআইএম-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “শিক্ষার উপর গৈরিকিকরণের শ্বাসরোধ BAPS স্বামীনারায়ণ মন্দিরের প্রধান অতিথি স্বামী জ্ঞানবাৎসল্যর দাবি মেনে কলকাতায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি শিক্ষার্থীদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মহিলারা হলের প্রথম পাঁচটি সারি খালি করতে বাধ্য হয়েছে। দাবি মানা না হলে তিনি চলে যাওয়ার হুমকি দেন। অর্থমন্ত্রী একজন মহিলা। সেক্ষেত্রেও তারা কি একই কাজ করবেন?”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ইকনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে দেশে মোট চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের মধ্যে ৩০ শতাংশই মহিলা। ২০০০ সালে যা ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। দেশের মোট ৮ লক্ষ ৬৩ হাজার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই মহিলা।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে আইসিএআই-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডঃ অমরজিত চোপড়া লিখেছেন, “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কি ধর্মীয় গুরুদের কাছে শুধুই একটা শ্লোগান?” তিনি আরও লিখেছেন, যেখানে প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন মহিলা সদস্য এবং ৪০ শতাংশের বেশি মহিলা শিক্ষার্থী সেখানে স্বামীর এই হাস্যকর এবং অযৌক্তিক দাবীর জন্য আমাদের সকলের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এই ঘটনার এক ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)। ওই ভিডিওতে, এক ব্যক্তিকে মঞ্চে ঘোষণা করতে শোনা যায়, যে কোনও মহিলা, মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা বক্তব্য চলাকালীন দাঁড়াবেন না। ঘোষণাকারী প্রধান অতিথির মঞ্চে আসার আগেই শিক্ষার্থীদের তাড়াতাড়ি সরে যেতে বলেন। প্রধান অতিথির মঞ্চে উপস্থিতির জন্য প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা হল প্রথম পাঁচটি সারিতে মহিলাদের বসতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও, স্বামীর শর্ত পূরণের জন্য, এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কর্মরত মহিলা আয়োজকদের হলের পিছনে বসতে বলা হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন