জুতো পরে উচ্চবর্ণের মহল্লা দিয়ে হেঁটে প্রাক-স্বাধীনতা যুগ থেকে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিলেন একদল দলিত যুবক। তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার মাদাথুকুলম তালুকের রাজাভুর গ্রামের ঘটনা। জীবনে প্রথমবার জুতো পায়ে দিলেন তাঁরা।
রাজাভুর গ্রামে ৯০০ ঘর বাসিন্দার মধ্যে ৮০০ ঘরই নাইকার, গাউন্ডারদের মতো পিছিয়ে পড়া তফশিলি সম্প্রদায়ের। এঁদের উপর উচ্চবর্ণের তরফ থেকে অলিখিত হুকুম ছিল, জুতো পরে রাস্তা দিয়ে কেউ হাঁটতে পারবে না। সাইকেলের প্যাডেল ঘোরানো যাবে না। এই নিয়ম না মানলেই মৃত্যু অনিবার্য। স্বাধীনতার আগে থেকেই এমন কুসংস্কার বংশ পরম্পরায় মেনে আসছে নাইকাররা। কিন্তু সব কিছুরই একটা শেষ থাকে। অবশেষে উচ্চবর্ণের এই হুকুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ৬০ নাইকার যুবক। উচ্চবর্ণের মহল্লা ‘কাম্বালা নাইকেন স্ট্রিট’-এর উপর দিয়ে জুতো পায়ে হাঁটলেন তাঁরা।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুসারে, এই যুবকরা যখন জুতো পরে হাঁটছিলেন তখন আশেপাশের লোকেরা তাঁদের দিকে তাকিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা ৫১ বছর বয়সী মুরুগানন্দম ওই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমাদের রাস্তায় জুতো পরে হাঁটা নিষেধ ছিল। চূড়ান্ত লাঞ্ছনা করা হত, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হতো। উচ্চবর্ণের মহিলারা হুমকি জারি করে বলতেন, আমাদের মতো দলিতরা জুতো পরে রাস্তায় হাঁটলে স্থানীয় দেবতাদের শাপে আমাদের মৃত্যু হবে, পরিবারের মৃত্যু হবে। আমরা মূল রাস্তা এড়িয়ে চলতাম, রাস্তায় উঠতাম না। যুগ যুগ ধরে এমন নিপীড়নের মধ্যেই বসবাস করছিলাম। কয়েক সপ্তাহ আগে, দলিতদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের নজরে বিষয়টি আনি আমরা।“
এই এসসি সম্প্রদায়ের অন্য এক সদস্য বলেন, "স্বাধীনতার পরে যখন অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন প্রভাবশালী বর্ণের সদস্যরা এই প্রথাটিকে চিরস্থায়ী করার জন্য একটি গল্প তৈরি করেছি্লেন। বলেছিলেন একটি ‘ভুডু পুতুল’ রাস্তার তলায় চাপা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও এসসি লোক জুতো পরে এই রাস্তায় হাঁটেন, তাহলে তিন মাসের মধ্যে তিনি মারা যাবেন। এসসি সদস্যরা সেই গল্পগুলি বিশ্বাস করেছিলেন এবং জুতো ছাড়াই হাঁটতে শুরু করেছিলেন। আজও সেই প্রথা অব্যাহত রয়েছে।“
Tamil Nadu Untouchability Eradication Front (Tiruppur)-এর সেক্রেটারি সি কে কানারাজ বিষয়টি জানতে পেরে গত সপ্তাহে ওই গ্রামে যান এবং দেখেন বেশ কিছু দলিত মহিলাকে ওই নির্দিষ্ট রাস্তায় উঠতেই দেওয়া হয়নি। সংগঠনটি এর প্রতিবাদ জানাতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এরপর সিপিআইএম এবং আরও কয়েকটি দলিত অধিকার সংগঠনের সহায়তায় ৬০ নাইকার যুবক জুতো পরে কাম্বালা নাইকেন স্ট্রিট দিয়ে হাঁটেন।
গ্রামের মধ্যে থাকা রাজকালিয়াম্মান মন্দিরেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না দলিতদের। এদিন ওই মন্দিরেও প্রবেশ করেন যুবকরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন