সাম্প্রতিককালে দেশের বুকে বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেলেও কোভিডকালে তা হয়েছে সর্বোচ্চ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের মধ্যে বাল্যবিবাহের হারে শীর্ষে আছে ঝাড়খন্ড এবং দ্বিতীয়স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। তবে, শুধু ঝাড়খণ্ড বা পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশের সর্বত্রই বাড়ছে এই প্রবণতা। সারা বিশ্বের কাছে যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।
বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা করে রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার। সম্প্রতি, সেই সমীক্ষা অনুযায়ী একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাতে সবচেয়ে করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে ঝাড়খণ্ডের। কখনও ১৮ বছর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আবার কখনও ২১ বছরেই কোনও মেয়েকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে একটা গোটা সংসারের। উদ্বেগ ক্রমশ বাড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় স্থানেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানকার চিত্রটা মোটেই আলাদা নয়।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, ঝাড়খণ্ডে প্রায় ৫.৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর হওয়ার আগেই। যেখানে শতাংশের নিরিখে শহরের তুলনায় গ্রামে বাল্যবিবাহের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। গ্রামে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ৭.৩ শতাংশ হলে, শহরে তা প্রায় ৩ শতাংশের কাছাকাছি।
ওই একই পরিসংখ্যান অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে ২১ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায় প্রায় ৫৪.৯ শতাংশ মেয়ের। ঝাড়খণ্ডে এই বিবাহের হার ৫৪.৬ শতাংশ। জাতীয় গড়ের হিসেব অনুসারে সারা দেশে ২৯.৫ শতাংশের বিয়ে হয় ২১ বছর বয়স হবার আগেই।
উল্লেখ্য, এর আগে ইউনিসেফ-এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছিলে ‘ফ্যাক্টশীট চাইল্ড ম্যারেজেস ২০১৯’। যে রিপোর্ট অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। সেই বছরের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে রিপোর্ট জানিয়েছিল রাজ্যে ৪১.৬ শতাংশ মেয়ের ১৮ পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে যায়। যা জাতীয় গড়ের থেকে অনেকটাই বেশি।
প্রসঙ্গত, প্রিভেনশন অফ চাইল্ড ম্যারেজেস অ্যাক্ট অনুসারে ২০১১ থেকে ২০২১-এর মধ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ২০২০ ও ২০২১ সালে। ২০১১ সালে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ১১৩ টি। ২০১২তে ১৬৩, ২০১৩তে ২২২, ২০১৪তে ২৮০, ২০১৫তে ২৯৩, ২০১৬তে ৩২৬, ২০১৭তে ৩৯৫, ২০১৮তে ৫০১, ২০১৯-এ ৫২৩, ২০২০তে ৭৮২ এবং ২০২১-এ ১০৫০।
উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১১ থেকে ২০২১-এর মধ্যে জমা পড়া অভিযোগের প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি এসেছে কর্ণাটক (৮৪৯) থেকে। তালিকায় এর পরেই আছে তামিলনাড়ু (৬৪৯), পশ্চিমবঙ্গ (৬১৯) এবং আসাম (৫৯৬)।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন