মালদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে মহম্মদ মুইজ্জু দায়িত্ব নিয়েছেন ৬ মাসেরও কম সময়। ইতিমধ্যেই তিনি ‘মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব’ কমানোর বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ভারতকে ১৫ মার্চের মধ্যে সামরিক ব্যক্তিদের প্রত্যাহার করতে বলেছেন। মালদ্বীপে বর্তমানে প্রায় ৮৮জন ভারতীয় সেনা আছে।
মুইজ্জু নির্বাচনী প্রচারে মালদ্বীপবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে মালদ্বীপ থেকে তিনি ভারতীয় সেনাদের বিতাড়িত করবেন। রাজনৈতিক মহলে তিনি ‘চিনপন্থী’ হিসাবেই পরিচিত। পাঁচ দিনের চিন সফর সেরে ফিরে আসার পর শনিবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ভারতের নাম উল্লেখ না করেই বেশ কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন – “আমরা ছোট হতে পারি, কিন্তু তা কাউকে আমাদের ভয় দেখানোর লাইসেন্স দেয়না।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে মইজ্জু সরকার ক্রমশ চিনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মালদ্বীপ ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। চিন সফর শেষে দেশে ফেরার পর মুইজ্জু সরকার একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছে। সেখানে স্পষ্টত সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি মালদ্বীপ রাষ্ট্রপতির মন্তব্যে তা আরও পরিষ্কার হয়েছে। মইজ্জু বলেন – “চিন-মালদ্বীপ সম্পর্ক চারটি নীতির উপর ভিত্তি করে: পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সার্বভৌমতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।”
সম্প্রতি মালদ্বীপ সরকার নতুন স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা করেছে। মালদ্বীপের অনেক নাগরিক সরকারী স্বাস্থ্য কর্মসূচির অধীনে চিকিৎসার জন্য অনেক ভারত ও শ্রীলঙ্কায় আসেন। তবে, মুইজ্জুর সাম্প্রতিক বিবৃতিতে, তিনি জানিয়েছেন যে মালদ্বীপবাসীরা এখন থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর হাসপাতালেও যেতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ইউরোপ ও আমেরিকার ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে সরাসরি ওষুধ আমদানি করা হবে।
ইন্ডিয়া ট্যুরিজম পরিসংখ্যান ২০২২ অনুসারে, ভারতে আগত মোট বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে ১.৭ শতাংশ আসেন মালদ্বীপ থেকে। মালদ্বীপ থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে, ৮৫.৮ শতাংশ আসেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। যা অন্যান্য সমস্ত উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৩ জানুয়ারি অন্য এক প্রেস বিবৃতিতে, মুইজ্জু ঘোষণা করেন যে – ‘সরকার চাল, চিনি এবং আটার মতো আমদানিকৃত খাদ্যের জন্য একটি দেশের উপর নির্ভরতা শেষ করবে’। এক্ষেত্রে নাম না করেই তিনি ভারতের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। পাশাপাশি প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য আমদানির বিষয়ে চিনের সঙ্গে যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন – সে বিষয়েও নিশ্চিত করেছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি।
উল্লেখ্য, OEC তথ্য অনুযায়ী (২০২১ সাল পর্যন্ত), মালদ্বীপে ভারতের রপ্তানি বার্ষিক ১০.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। ১৯৯৫ সালে যা ছিল ৩১.৬ মিলিয়ন ডলার, তা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪১৬ মিলিয়ন ডলারে।
সাম্প্রতিক সময়ে লাক্ষাদ্বীপকে কেন্দ্র করে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে দানা বেঁধে ওঠা বিতর্কের পরেই এত দ্রুত মুইজ্জু এরকম ভাবনাচিন্তা করছেন সেটা ভাবা ঠিক হবেনা। বরং বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তিনি ভারতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর কথা বলে আসছেন। যা এক সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। ভারতের আয়তনের তুলনায় ০.০১ অংশের মালদ্বীপের আদৌ ভারতের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবার মত কোনও শক্তি নেই। সুতরাং নিজের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পথে যে মালদ্বীপ যাচ্ছেনা তা স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে ভারতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে মালদ্বীপের একের পর এক ঘোষণার পেছনে আসল কলকাঠি তাহলে কোন দেশের?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন