Inequality: ভারতে বাড়ছে বৈষম্য - দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বিলিওনেয়ারই উচ্চবর্ণের - রিপোর্ট

People's Reporter: সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশের বেশি আছে দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে। ১৯৮০ সালে যা ছিল ১২.৫ শতাংশ।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীছবি ফেমিনিজম ইন ইন্ডিয়ার সৌজন্যে
Published on

ভারতে দ্রুত বেড়ে চলেছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। সম্পদ বাড়ছে উচ্চবর্ণের মানুষের। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ বিলিওনেয়ারই উচ্চবর্ণের। সম্প্রতি প্রকাশিত টুওয়ার্ডস ট্যাক্স জাস্টিস অ্যান্ড ওয়েলথ রিডিস্ট্রিবিউশন ইন ইন্ডিয়া শীর্ষক সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

রিপোর্টে ভারতের এই বৈষম্যকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষ ০.০০১% (১০,০০০-এর কম ব্যক্তির) মোট সম্পদ সম্পূর্ণ নীচের দিকে থাকা ৫০% (৪৬ কোটি ব্যক্তি) এর কাছে থাকা মোট সম্পদের প্রায় ৩ গুণ। ওই রিপোর্ট অনুসারে, শীর্ষ ১% মোট সম্পদের ৪০% মালিক, শীর্ষ ০.১% মোট সম্পদের ৩০%, শীর্ষ ০.০১% মোট সম্পদের ২২% এবং শীর্ষ ০.০০১% একাই ১৭%-এর মালিক। যার মধ্যে শীর্ষ ০.০০১%-এর কাছে গড় নিট সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা।

সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশের বেশি আছে দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে। ১৯৮০ সালে যা ছিল ১২.৫ শতাংশ। রিপোর্ট জানাচ্ছে, উনিশ শতকের পর থেকে ভারতের সম্পদ বন্টন এই দশকে আরও অসমভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের এখনও অনেক বেশি সুবিধাভোগী এবং সমৃদ্ধ।

ওই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ভারতে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদের ৮৮.৪ শতাংশই উচ্চবর্ণের হাতে রয়েছে। অন্যদিকে, সবথেকে প্রান্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে আছে তফসিলি উপজাতি (ST) গোষ্ঠীভুক্ত মানুষজন। উল্লেখযোগ্যভাবে ধনী ভারতীয়দের তালিকায় তাঁদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে বর্ণভেদ এখনও কতটা যুক্ত তা এই সমীক্ষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বিলিওনেয়ার ছাড়াও ২০১৮-১৯-এর সর্ব-ভারতীয় ঋণ ও বিনিয়োগ সমীক্ষা (AIDIS) অনুসারে, উচ্চবর্ণের মানুষরা মোট জাতীয় সম্পদের প্রায় ৫৫ শতাংশের মালিক৷ ২০২১ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুসারে দেশে সাধারণ গোষ্ঠীভুক্ত (জেনারেল ক্যাটাগরি) মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ। সর্বোচ্চ বর্ণগোষ্ঠী ব্রাহ্মণের সংখ্যা ৪ শতাংশ। বাকি ৩৬ শতাংশ ভারতীয়ই ওবিসি, তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত।

দেশে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিভিন্ন সামাজিক বিষয়, ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা – প্রায় সবক্ষেত্রেই এখনও উচ্চবর্ণের প্রভাব বিদ্যমান। ফলত নতুন ব্যবসা স্থাপন এবং সম্পদ সৃষ্টি বা সম্পদের মালিক হবার ক্ষেত্রেও উচ্চবর্ণের মানুষরাই অনেকটাই এগিয়ে। ঐতিহাসিকভাবে এখনও পর্যন্ত দেশের বহু অংশেই দলিতরা কোনও জমির মালিক নয়। যার ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও তাঁরা অনেকটাই পিছিয়ে।

সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই সম্পদ বন্টনের বৈষম্য বাড়তে থাকে। যা ১৯৮০ সালের পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করে। যদিও ২০১৪-২৫ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত এই বৈষম্য ক্রমশই উচ্চহারে বেড়েছে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, যা বর্ণপ্রথার গভীরে প্রোথিত বলেই মনে হয়, সেই বিষয়ে অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে ভারতের সামগ্রিক অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। দেশে সমস্ত রকমের সুযোগসুবিধা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধাগুলি, বর্ণ বা আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সকলের জন্য সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন।

ছবি প্রতীকী
UN Women: ১১৩ দেশে কখনোই মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান ছিল না - রাষ্ট্রসংঘের সমীক্ষায় স্পষ্ট লিঙ্গ বৈষম্য
ছবি প্রতীকী
অতিরিক্ত সুবিধার আশায় ২০২৪ সালে ভারত ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন ৪,৩০০ জন কোটিপতি!

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in