পেশা হিসেবে সংকটে সাংবাদিকতা। গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্তম্ভের গায়েও আজ দুর্নীতির দাগ লেগেছে। বর্তমানে ভারতের গণমাধ্যমগুলির পাল্লা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের দিকেই ভারী। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত মহলের জন্য উদ্বেগজনক এমন তথ্যই উঠে এলো দেশজোড়া এক সমীক্ষায়।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৮২ শতাংশ সাংবাদিকের মতে, তাঁদের গণমাধ্যম দেশের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি একটু বেশিই ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ৬২ শতাংশ মনে করেন প্রকাশিত সংবাদের অধিকাংশই বিরোধীদের বিরুদ্ধে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমগুলির মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা গিয়েছে।
সম্প্রতি নয়াদিল্লির এক সমীক্ষা সংস্থা Lokniti-CSDS দেশের গণমাধ্যমগুলির হাল-হকিকৎ নিয়ে সমীক্ষা করে ‘Media in India: Trends and Patterns’ নামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। দেশের ইংরেজি, হিন্দি ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার তিন ধরণের সংবাদমাধ্যমের (সংবাদপত্র, সংবাদ চ্যানেল ও অনলাইন মাধ্যম) ২০৬ জন সাংবাদিকদের নিয়ে সমীক্ষাটি করা হয়েছে। উত্তরদাতা সাংবাদিকদের মধ্যে ৪১ শতাংশ হিন্দি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক, ৩২ শতাংশ ইংরেজি মাধ্যমের সাংবাদিক এবং বাকি অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা রয়েছে। পাশাপাশি, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মধ্যে ৩৭ শতাংশেরই বয়স ৪৬-এর বেশি।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাংবাদিকদের মতে বর্তমানে দেশের গণমাধ্যমের শিরায় শিরায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের রং লেগে গিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়েই খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সমীক্ষায় প্রত্যেক ৫ জনের মধ্যে ৪ জন সাংবাদিকেরই মত, গণমাধ্যমগুলি আজকাল ভারতীয় জনতা পার্টির খবর প্রচারে একটু বেশিই জোর দিয়েছে। আবার উত্তরদাতা তিন-চতুর্থাংশ সাংবাদিকের মতে, বর্তমানে সংবাদ চ্যানেলগুলি তাদের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে। পাশাপাশি ৫৫ শতাংশ সাংবাদিকদের মতে সংবাদপত্রগুলিকে তাদের কাজে সবচেয়ে বেশি বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বর্তমানে গণমাধ্যমগুলি যেধরণের নীতি অনুসরণ করছে তাতে আদতে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে সাংবাদিকতা পেশার উপরেই। দিনের পর দিন নিকৃষ্টতম হচ্ছে দেশের সাংবাদিকতার মান। যার ফলে সাংবাদিকতা পেশার উপর ভরসা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মহান এই পেশার প্রতি কমছে সম্মান। এর পাশাপাশি, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক সমাজমাধ্যমে হোক কিংবা জনসমক্ষে তাঁদের নিজস্ব মতামত জানাতে দ্বিধা বোধ করেন বলে জানা গিয়েছে সমীক্ষার রিপোর্টে এবং এই দ্বিধা বোধের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চাকরি হারানো ও রাজনৈতিক দলগুলির চক্ষুশূল হয়ে যাওয়ার ভয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন