চা বাগান, কুয়াশায় মোড়া জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তার মধ্যে দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে চলছে টয় ট্রেন। ঐতিহাসিক টয় ট্রেনের নাম শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে দার্জিলিঙের কথা। উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে প্রথম জন্ম টয় ট্রেনের। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত তার যাত্রাপথ। আধুনিক যুগেও এর কদর কমেনি একটুও। বরং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়েছে টয় ট্রেনও। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি পথে ঘুরে রোমাঞ্চকতার সাধ নিতে আপনাকে চড়তেই হবে টয় ট্রেনে। তবে শুধু দার্জিলিঙে নয়, টয় ট্রেন ছুটছে ভারতেরও আরও কয়েকটি পাহাড়ি পথে।
ভারতে, দার্জিলিং ছাড়াও শিমলা, উটি, মাথেরন, পাঠানকোটেও টয় ট্রেন চলে। সে পথের আকর্ষণও কম নয়। ভ্রমণপিপাসুরা যাত্রাপথের আনন্দটুকু প্রাণ ভরে নিতে চেপে বসেন টয় ট্রেনে। এক নজরে ভারতের পাঁচটি টয় ট্রেন –
শিলিগুড়ি-দাজিলিংঃ জানা যায়, ১৮৭৮ সালে এই লাইন বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতার ‘টম মিচেল অ্যান্ড র্যামসে কোম্পানি’কে। ১৮৮০ সালের মার্চে ভাইসরয় লর্ড লিটনকে নিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে যাত্রা শুরু করে টয় ট্রেন। তবে ১৮৮১ সালে শিলিগুড়ি থেকে প্রথম দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেন পৌঁছয়। পথের চড়াইকে সহজ করতে ১৯১৯ সালে তৈরি হয় বাতাসিয়া লুপ। ১৯৯৯-এর ২ ডিসেম্বর ইউনেস্কো এই জয় রাইডকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দেয়। ২০২২ সালে টয় ট্রেনে চালু হয় ভিস্তা ডোম কোচ। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত কাচের জানলা দিয়ে ঘেরা আরামদায়ক কোচে বসে প্রকৃতিকে আরও ভাল ভাবে উপভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে ট্রেনটিতে। এই পথেই পড়ে উচ্চতম স্টেশন ঘুম।
কালকা-শিমলা: কালকা থেকে শিমলা, ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে রয়েছে ১৮টি স্টেশন। ট্রেনটি প্রায় শ’খানেক সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এই পথের সৌন্দর্য লুকিয়ে অনামী স্টেশনগুলিতে। মেঘের চাদর মাখা পরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্মগুলিতে মাথা দোলায় রঙিন ফুলের দল। ১৯০৩ সালে কালকা-শিমলা রেলপথের সূচনা। হরিয়ানার কালকা থেকে হিমাচল প্রদেশের শিমলা পর্যন্ত ছোটে এই টয় ট্রেন ২০০৮ সালে ইউনেস্কোর ‘হেরিটজ’ তকমা পেয়েছে।
উটি-মেট্টুপালায়ম: নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ের অন্তর্গত ‘হেরটিজ’ টয় ট্রেনটি শুধু দেশ নয়, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। এই রেলওয়ে শুধু ভারতের নয়, এশিয়ার মধ্যেও অন্যতম খাড়াই রেলপথ হিসাবে পরিচিত। ১৯০৮ সালে এই রেলপথে প্রথম টয় ট্রেন চলেছিল। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বত্তুরের মেট্টুপালাইয়ম স্টেশন থেকে উধগমণ্ডলম, অর্থাৎ উটি স্টেশন পর্যন্ত এই ট্রেনের যাত্রাপথ। পর্যটকেরা উটি থেকে কন্নুর বা কন্নুর থেকে উটি ফেরার জন্য বেছে নেন টয় ট্রেন।
নেরাল-মাথেরন টয় ট্রেন: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০ মিটার উচ্চতায় এই রেলপথ। গরম থেকে মুক্তি পেতে ১৮৫০ সালে মহারাষ্ট্রের মাথেরনকে আস্তানা করে ব্রিটিশেরা। জানা যায়, সেই সময় ব্রিটিশদের খুশি করতে এই টয় ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেন মুম্বইয়ের শিল্পপতি আদমজি পিরভয়। ১৯০৭ সালে চালু হয় এই টয় ট্রেন। ২১ কিলোমিটার পথ জুড়ে উপভোগ করা যায় ঘন সবুজ পাহাড়ি উপত্যকার দৃশ্য। টয় ট্রেনের যাত্রাপথে পড়ে নেরাল, জুমাপট্টি, আমন লজ, মাথেরন জনপদগুলি।
পাঠানকোট-যোগিন্দরনগর টয় ট্রেন: ১৯২৯ সালে হিমাচল প্রদেশে এই ট্রেনযাত্রার সূচনা হয়। রয়েছে ১৮টি স্টেশন রয়েছে। এই ট্রেন নিয়ে অবশ্য নানা রকম গল্প রয়েছে। অনেকের মতে, এই ট্রেন যাত্রায় কেউ কেউ ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন। একটি সমাধিস্থলের উপর দিয়ে রেলপথ নির্মিত হয়েছে বলেই এই ধরণের ভৌতিক গল্প ভেসে বেড়ায়। ভ্রমণপিপাসুরা ভৌতিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চাইলে একবার যেতেই পারেন এখানে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন