জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিপিআই ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন কানহাইয়া কুমার। মঙ্গলবার দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিলেন। কানহাইয়া কুমারের সঙ্গেই এদিন কংগ্রেসে যোগ দিলেন গুজরাটের দলিত নেতা ও নির্দল বিধায়ক জিগনেস মেভানী। এদিন তাঁরা শহীদ ই আজম ভগত সিং পার্কে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এদিন সকাল থেকেই দিল্লিতে কানহাইয়া কুমারকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার লক্ষ্য করা যায়। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লির জেএনইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার সিপিআই-তে যোগদান করেন। ওই বছরই বিহারের বেগুসুরাই কেন্দ্র থেকে সিপিআই প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন।
অন্যদিকে গুজরাটের ভাদগাম কেন্দ্রের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেভানী গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনেই জয়লাভ করেছিলেন। আসন্ন গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর কংগ্রেসে যোগদান গুজরাটে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কংগ্রেসে যোগ দেবার আগে গত দু’সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছিলেন কানহাইয়া কুমার। রাহুল গান্ধী ছাড়াও কংগ্রেসে যোগ দেবার আগে তিনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার সঙ্গেও বৈঠক করেন।
সিপিআই বিহার সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেসে যোগ দেবার কয়েকদিন আগেই পাটনার সিপিআই অফিস থেকে নিজের উদ্যোগে লাগানো এসি মেশিনটি খুলে নিয়ে যান কানহাইয়া কুমার। এই বিষয়ে রাজ্য সিপিআই সম্পাদক রাম নরেশ পান্ডে এদিন জানিয়েছেন, কানহাইয়া এসিটি খুলে নিয়ে যাবার অনুমতি চেয়েছিলো। আমি তাঁকে সেই অনুমতি দিয়েছি। কারণ ওই এসি কানহাইয়া নিজের পয়সায় লাগিয়েছিলো।
যদিও এদিন সকালেও রাম নরেশ পান্ডে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসে যোগ দেবে। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর মতাদর্শগত মিল হওয়া অসম্ভব। তিনি আরও জানান, গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর সিপিআই ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেও যোগ দিয়েছেন কানহাইয়া এবং তখনও তিনি দল ছাড়ার অথবা কংগ্রেসে যোগ দেবার বিষয়ে কিছু জানাননি।
যদিও সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে আজই সিপিআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে অবশেষে কংগ্রেসের পথেই পা বাড়ালেন এক সময়ের বাম ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতা কানহাইয়া কুমার।
অবশ্য কানহাইয়া কুমারকে নিয়ে এই গুঞ্জন এবারই প্রথম নয়। এর আগে এই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মন্ত্রী অশোক চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেন কানহাইয়া কুমার। যে সাক্ষাতের পরই একাধিক সংবাদমাধ্যমে তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে খবর করা হয়। সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি করে সিপিআই নেতৃত্বের সঙ্গে কানহাইয়ার সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। এর একাধিক কারণও তুলে ধরে মিডিয়া। প্রথমত, গত ১ ডিসেম্বর হায়দারাবাদ সিপিআইয়ের অফিস সচিব ইন্দু ভূষণ পাটনা সফরে এলে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কানহাইয়া। এতে দল তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক সঙ্কট, কৃষক আন্দোলন, উমর খালিদ সহ একাধিক সমাজকর্মীর গ্রেফতারি সহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় সেরকম কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি কানহাইয়া কুমারকে। কৃষক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে একাধিকবার দিল্লিতে তাঁকে ডাকা হলে, সেই ডাকে সাড়া দেননি তিনি বলে দাবি সংবাদমাধ্যমগুলির।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তাঁকে রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ব্রিগেড সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যোগদানের আহ্বান জানানো হলেও অধিকাংশ সময়েই তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। হাতে গোনা দু’একটি সভা এই রাজ্যে করলেও বরাবর দূরত্ব বজায় রেখেছেন রাজ্যের প্রধান বাম দল সিপিআই(এম)-এর সঙ্গেও। একাধিকবার শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেকে বামেদের সভা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন সে নজিরও আছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন