কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলা হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক উত্তজনা, সংঘর্ষ, খুন-জখমের ঠিকানা। এক দুজন নয়, গত ৮ বছরের বিজেপি শাসিত এই জেলাতেই নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ১২ জন মানুষ (হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের)। আর, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ টি।
জানা যাচ্ছে, গত ১৬ দিনের মধ্যে এই জেলাতে ৩ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২১ জুলাই, প্রথম খুন হন ১৯ বছর বয়সী মুসলিম অভিবাসী শ্রমিক - মাসুদ। ম্যাঙ্গালুরু থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে বেলারে শহরে তাঁর খুনের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়।
সেই রেশ না কাটতে কাটতেই, ২৬ জুলাই দুষ্কৃতিদের হাতে খুন হন বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী প্রবীণ কুমার নেত্তারু। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়েই উত্তেজনা ছড়ায়। শান্তি ফেরাতে পুলিশ ইন্টারনেটের পাশাপাশি, এলাকায় দোকান, হোটেল বন্ধ করে দেয়। খুনের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি জেলায় বন্ধের ডাক দেয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল।
দু'দিন না পেরোতেই, ২৮ জুলাই নৃশংস ভাবে খুন হন ২৩ বছরের মোহাম্মদ ফাজিল। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৬ জুলাই খুন হওয়া বিজেপি কর্মী প্রবীণের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ফাজিলকে হত্যা করেছে বলে জেরায় স্বীকার করেছে অভিযুক্তরা। ধৃতদের সকলের সঙ্গেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উপকূলীয় কর্ণাটকে (যার মধ্যে দক্ষিণ কন্নড়, উডুপি এবং উত্তর কন্নড় রয়েছে) ১৯ টি আসনের মধ্যে ১৭ টি জিতেছে বিজেপি। কিন্তু, গত কয়েক বছরে কর্ণাটকের উপকূলীয় এই অঞ্চলে খুনের ঘটনা বেড়েছে। খুন হচ্ছে বিজেপি কর্মীরাও। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির।
গত সপ্তাহে, বিক্ষোভের মুখে পড়েন দক্ষিণ কন্নড়ের সাংসদ নলিন কুমার কাতিল। মুসলিম 'মৌলবাদীদের' বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা।
এদিকে, আবার খুনের ঘটনার তদন্তে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (PFI)। ক্ষোভ প্রকাশ করে PFI জানিয়েছে, রাজ্যের বিজেপি সরকার হিন্দু ব্যক্তিদের হত্যার প্রতি 'অতিরিক্ত মনোযোগ' দিয়েছে। রাজ্যে দু'জন মুসলিম যুবককে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে তাঁর কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
এদিকে, ২০২০ সালে স্টেট ক্রাইম রেকর্ড প্রকাশ করেছে কর্ণাটক পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কন্নড় জেলা ২০২০ সালে ৬৭ টি দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ম্যাঙ্গালুরু কমিশনারেট ২৩ টি সংঘর্ষ ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। সরকারী নথিতে এই সংঘর্ষের কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে কর্ণাটক পুলিশ সূত্র দাবি করেছে যে বেশিরভাগই সংঘর্ষ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণে ঘটেছে।
এছাড়া, কর্ণাটক কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি ও রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামালিঙ্গা রেড্ডি জানান, ‘২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বলেছিল- ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে ২৩ জন হিন্দু হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা প্রতিটি মামলা তদন্ত করে দেখেছি, মাত্র ৮ টি মামলা ছিল রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িকগত। বাকিগুলি ঘটেছে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে। আমরা পুলিশ রিপোর্টও প্রকাশ করেছি। কিন্তু, বিজেপি বলছে না যে ১৬ টি মুসলিমকে খুন করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দক্ষিণ কন্নড়-ম্যাঙ্গালোরে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রায় ৭ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন