কর্ণাটকের বিটকয়েন এবং ড্রাগ কেলেঙ্কারি, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসের মধ্যে জোরদার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। রাজ্যের এই দুই কেলেঙ্কারিতে শাসকদলের দুই প্রভাবশালী নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়লো।
এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে এখন আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলিতে সংঘটিত বিটকয়েন কেলেঙ্কারিও যুক্ত হয়েছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ এবং সিটি ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাত থেকে নিয়ে এই মামলা ইতিমধ্যেই সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অভিযোগ, বিজেপির দুই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ অভিযুক্তদের আড়াল করতে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তে এই ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। সূত্রের খবর, এর ফলে আগামীদিনে রাজ্যের রাজনীতিতে তোলপাড় তৈরি হবে বলে অনুমান।
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি রাজ্যে সাইবার অপরাধ, উপকূলীয় কর্ণাটকের সাইবার কার্যকলাপ এবং বিটকয়েন কেলেঙ্কারির সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত অর্থনৈতিক অপরাধের উপর নজরদারি রেখেছে। সূত্র অনুসারে, এই কেলেঙ্কারিতে রাজনৈতিক যোগ থাকার কারণে তদন্তকারীদের জন্য তা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে এবং কর্ণাটকের এই বিষয়ের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা জড়িয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবেও বেশ কিছু পরিবর্তন হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বর্তমানে সিআইডির এক বিশেষ দল এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং ডার্ক নেট থেকে ওষুধ কেনার জন্য বিটকয়েন ব্যবহার সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিক চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
মামলার প্রধান আসামি শ্রীকৃষ্ণ রমেশ ওরফে শ্রীকির বিরুদ্ধে ভিভিআইপি গ্রাহকদের বিটকয়েন সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীকিকে গত বছর সিটি ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তকারীরা মাদক চোরাচালানের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিটকয়েন কেলেঙ্কারির কথা উঠে আসে।
তদন্ত চলাকালীন পুলিশ ৯ কোটি টাকা মূল্যের ৩১টি বিটকয়েন বাজেয়াপ্ত করে। এরপর ২০২১ সালের মার্চ মাসে সিটি ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ এই মামলায় একটি চার্জশিট জমা দেয়। মামলায় আরও তদন্তের জন্য পরবর্তী সময়ে তা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত থেকে জানা যায়, প্রধান অভিযুক্ত শ্রীকি একটি সরকারী পোর্টাল হ্যাকিংয়ে জড়িত ছিল। সিসিবি-র তদন্তকারী অফিসাররা ইন্টারপোলকে হ্যাকিং সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে এবং অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে।
কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামালিঙ্গা রেড্ডি এই কেলেঙ্কারির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানান, "দুই প্রভাবশালী নেতা বিটকয়েন কেলেঙ্কারি ও মাদক কান্ডে জড়িত। এই কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন জড়িত। কর্ণাটকে বিজেপি মামলাটি চেপে রাখতে চাইছে। অভিযুক্ত শ্রীকিকে গ্রেফতার করতে এত দেরি হয়েছিল কেন? সত্য প্রকাশ্যে এলে অনেক বিজেপি নেতাকে তাদের পদ হারাতে হবে।”
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার দাবি করেছেন, বিটকয়েন কেলেঙ্কারিতে পুলিশ, রাজনীতিবিদ এবং শিল্পপতিরা জড়িত এবং বিজেপি মামলাটি বন্ধ করতে চাইছে। তাঁর দাবি, মামলা বন্ধ করলেই বিজেপির লাভ।
এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বলেন, এই মামলার একটি বিশদ তদন্ত চলছে এবং কোনও ব্যক্তিকে রক্ষা করার কোনও প্রশ্নই আসে না, তিনি যতই প্রভাবশালী হোন না কেন। তদন্ত শেষ হলে সরকার মামলাটি ইডি বা সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তবে, বিরোধী দলনেতা সিদ্দারামাইয়া ফের বিজেপিকে আক্রমণ করে প্রশ্ন তোলেন কেন এত দিন এই মামলায় গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হয়নি? মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই এখন ইডি বা সিবিআই-এর হাতে মামলা তুলে দেওয়ার কথা বলছেন কেন? তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোনোভাবেই এই কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়া উচিত নয়।
মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, তাঁর সরকার সততার সাথে ড্রাগস, আর্থিক তছরূপ এবং বিটকয়েন কেলেঙ্কারির তদন্ত চালাচ্ছে এবং কাউকে বাঁচানোর প্রশ্নই আসে না। সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের আমলে কেন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি তাও তিনি জানতে চান।
তিনি বলেন, "আমি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। গত আড়াই বছরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মামলাগুলো এমনভাবে দায়ের করা হয়েছে যাতে আসামিরা শাস্তি পায় এবং আইনের হাত থেকে তাদের পালানোর কোনো পথ না থাকে।
বোম্মাই জানান, "বিটকয়েন কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত শ্রীকৃষ্ণ রমেশ ওরফে শ্রীকিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যদিও, পুলিশ পাঁচ থেকে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করলেও, শ্রীকিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।"
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "খেয়াল করুন সেই সময় কোন দল শাসন করছিল (সিদ্দারামাইয়ার অধীনে কংগ্রেস)। তিনি জামিন পেয়েছিলেন। তারপরেও, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়নি। তিনি ইউবি সিটিতে অন্য এক মামলায় তিনি জড়িত ছিলেন এবং সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যদি তাকে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত, তখনই সবকিছু প্রকাশ হয়ে যেত।
মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাইয়ের দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, তদন্তের সময় আর্থিক তছরূপ, হ্যাকিং এবং মাদক ব্যবসায় শ্রীকির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল এবং ইডি ও সিবিআইকে আনা হয়েছিল।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন