কর্ণাটকের সাত জেলার শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিলে সপ্তাহে তিনবার দুপুরের খাবারের সাথে ডিম সরবরাহ করার কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহ পরেই বেশ কয়েকটি ধর্মীয় গোষ্ঠী বিরোধিতার মুখে পড়লো। বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, লিঙ্গায়েত সন্ন্যাসী চন্নাবসাবানন্দ স্বামীজি বলেন, যদি ডিম দেওয়া হয়, তাহলে স্কুলগুলি সামরিক হোটেলে পরিণত হবে। ডিমের বদলে ডাল ও অন্য খাবার দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে নামা হবে।
লিঙ্গায়েত গোষ্ঠীর অনেক সদস্য অপুষ্টি মোকাবিলার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় বাসভ দল, লিঙ্গায়েত ধর্ম মহাসভা, আক্কানাগালম্বিকা মহিলা গণ কার্যকারথারু, বাসব মন্তপা এবং রাষ্ট্রীয় বাসভ দল।
নিরামিষভোজী ছাত্রদের ডিমের বদলে কলা দেওয়া হবে বলে সরকারের ঘোষণার পরেও এই বিরোধিতা জারি আছে। যদিও প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও, বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী এবং রাজনীতিবিদরা রাজ্য সরকারের কাছে এই পদক্ষেপে পিছপা না হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। জগতিকা লিঙ্গায়ত মহাসভার সেক্রেটারি এস এম জমাদার দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন, যতক্ষণ না নিরামিষভোজী শিশুদের জন্য ভালো বিকল্প না পাওয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম সরবরাহ করা নিয়ে সংগঠনের "কোনও সমস্যা নেই"। তিনি আরও বলেন, সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে না।
কর্ণাটকে মিড ডে মিলের সাথে ডিম সরবরাহের বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরে সমাজকর্মী এবং অন্যান্যদের দাবি ছিল। গত ২৩ নভেম্বর, রাজ্য সরকার জানায়, যে সাত জেলার ছাত্রদের মিড ডে মিলে ডিম দেওয়া হবে। এই সাত জেলা হল, বিদর, রাইচুর, কালাবুরগি, ইয়াদগির, কোপ্পাল, বাল্লারি এবং বিজয়পুরা। কারণ এই সমস্ত অঞ্চলে অপুষ্টি এবং রক্তশূন্যতার হার বেশি। নিউজ মিনিটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন একথা জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি, সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে 'আওয়ার ফুড, আওয়ার রাইট' মঞ্চর পক্ষ থেকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে, সরকার যেন এই বিষয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের চাপের কাছে মাথা নত না করে।
মঞ্চের প্রশ্ন, কেন রাজ্যের অন্যান্য অংশের শিশুরা তাদের মধ্যাহ্নভোজে ডিম থেকে বঞ্চিত হবে এবং কেন সপ্তাহে তিনদিনের পরিবর্তে প্রতিদিন ডিম দেওয়া যাবে না। তারা বলেন, “আমরা, বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংস্থার সদস্যরা, কর্ণাটকের নির্বাচিত জেলাগুলিতে শিশুদের জন্য ডিম সরবরাহ করার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। মিড ডে মিলের অংশ হিসাবে প্রতিটি শিশুর খাদ্যের অধিকারকে এতে উন্নত হবে। ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৩ অনুসারে শিশুদের অপুষ্টি কমাতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এটি খুবই প্রয়োজন।"
মঞ্চ আরও জানিয়েছে, “কর্ণাটকে শিশুদের অপুষ্টির বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন পুষ্টিবিদ, ডাক্তার, কর্মী, আইনজীবী এবং নাগরিকদের একটি দল হিসাবে, আমরা মনে করি সমস্ত স্কুলের দিনে মিড-ডে মিলের অংশ হিসাবে ডিম দেওয়া উচিত। কর্ণাটকের যে সমস্ত বাচ্চা ডিম খেতে অভ্যস্ত, তাদের সকলের জন্য।"
পঞ্চম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা (২০১৯) উদ্ধৃত করে মঞ্চ জানিয়েছে, রাজ্যে ৩৫.৪% শিশুর বৃদ্ধি কমে গেছে, ৩২.৯% কম ওজনের এবং মহামারীজনিত কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবার সম্ভাবনা আছে বলে প্রকাশ করেছে। এছাড়াও তারা অন্যান্য পদক্ষেপের সাথে শিশুদের দুধ সরবরাহ করারও দাবি করেছেন।
তাঁরা আরও জানিয়েছেন কর্ণাটকই একমাত্র দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য যেখানে মিড ডে মিলে ডিম প্রবর্তন করা হয়নি। যদিও সরকারি এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের ৯৪% শিক্ষার্থী ডিম খায়। তারা জানিয়েছে তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্য যাদের বাজেট একই রকম সেখানেও সপ্তাহে পাঁচ দিন ডিম দেওয়া হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন