ভাষা বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ ইন্ডিয়া (আইসিএআই) সভাপতি নীহার এন জাম্বুসারিয়া। এক আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করায় জাম্বুসারিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সংস্থার বহু সদস্য। বহু সদস্যই জাম্বুসারিয়াকে জানিয়েছেন যে, তিনি দ্য ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI) এর সভাপতি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট অফ নর্থ ইন্ডিয়ার নয়।
সদস্যদের প্রতি তাঁর মাসিক বার্তায়, জাম্বুসারিয়া বলেছেন: "আমাদের মাতৃভাষা হিন্দির ক্ষমতা উপলব্ধি করে, ICAI (ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ ইন্ডিয়া) তার কর্মসংস্কৃতিতে হিন্দির ব্যবহার আরও বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে।"
সংস্থার প্রায় তিন লক্ষ সদস্যকে তিনি তাঁর অক্টোবর মাসের বার্তায় জানান, "সদস্যদের তাদের কাজে এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে আলাপচারিতায় হিন্দি ভাষা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হবে।"
জাম্বুসারিয়া বলেন, "যখন সমগ্র বিশ্ব ভারতকে বিশ্বনেতা হিসেবে দেখছে, উত্তরসূরি এবং মশাল বাহক হিসাবে দেখছে, তখন আমাদের ভাষাকেও অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে হবে৷ ভারতকে 'আত্মনির্ভর ভারত' তৈরির লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টার সাথে, আমাদেরও মাতৃভাষার ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার দিকে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এগিয়ে চলা উচিৎ।
যদিও ভাষা প্রসঙ্গে জাম্বুসারিয়ার এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই বেশ কয়েকজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এই বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সোসাইটি অফ অডিটরসের সভাপতি পিএস প্রভাকর আইএএনএসকে বলেন, "আইসিএআই সভাপতি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কাছে তার মাসিক বার্তায় হিন্দি ভাষার 'প্রচার' করে অযৌক্তিকভাবে বিতর্ক তৈরি করেছেন এবং আমি সত্যিই জানি না তিনি কাকে খুশি করার চেষ্টা করছেন।"
প্রভাকর জাম্বুসারিয়ার সমালোচনা করে আরও বলেন: "আত্মনির্ভর প্রসঙ্গে (যেখানে একক ভাষার উপর অগ্রাধিকার নেই) এবং ভারতের সংবিধান যে কোনো ভাষাকেই রাজভাষা বা জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়নি সে সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান দুঃখজনকভাবে কম।"
প্রভাকর বলেন, জাম্বুসারিয়ার প্রচেষ্টা হল বৈচিত্র্য ধারণার মধ্যে ঐক্যকে উপহাস করা, যে প্রসঙ্গে বেশ কিছু জাতীয় নেতাও এই ধরণের কথা বলেছেন।
জাম্বুসারিয়া তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন আশা করে প্রভাকর বলেন, "আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে তিনি কি জানেন যে তিনি যে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন সেটি হল ICAI এবং ICANI নয়, যেখানে N উত্তরের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।"
প্রভাকর জানান যে, আইসিএআই তিন লক্ষ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাকাউন্টিং পেশাগত সংস্থাগুলির মধ্যে একটি, যাদের অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে থাকা উচিত। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে বহু ICAI সদস্য IFRS (ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড) এর চিয়ারলিডারে পরিণত হয়েছেন। যা এক 'আমদানি করা অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড।"
জাম্বুসারিয়ার কড়া সমালোচনা করে প্রভাকর বলেন, তাঁর বার্তায় জাম্বুসারিয়া 'বিশ্ব' প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করলেও শেষে 'আঞ্চলিক' ভাষার পক্ষে ব্যাটিং করেছেন। তিনি কি গ্যালারিতে খেলছেন? এটা একদমই চটকদারি স্ট্যান্ট।
প্রভাকর মনে করিয়ে দেন, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন: "সমগ্র দেশে এক ভাষা অত্যন্ত অপরিহার্য, যা বিশ্বে তার পরিচয় হয়ে ওঠে।"
শাহর এই মন্তব্যের পরেই ডিএমকের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এরপর অমিত শাহ স্পষ্ট করে দেন যে তিনি কারও উপর হিন্দি চাপিয়ে দিতে চান না।
DMK সাংসদ এবং মুখপাত্র TKS Elangovan ওইসময় IANS কে জানিয়েছিলেন: "বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য হল ভারতের পরিচয়, যা আমরা সমর্থন করি। যদি ভারতের বিশ্ব পরিচয়ের জন্য একটি ভারতীয় ভাষা প্রয়োজন হয়, তাহলে তামিল সবচেয়ে উপযুক্ত।"
তিনি আরও বলেন: "তামিল বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি। এটি শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর এবং ভারতে সরকারী ভাষা। এই ভাষার শাস্ত্রীয় মর্যাদা রয়েছে এবং এটি সাহিত্যে সমৃদ্ধ। তামিল সংস্কৃতি দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব দেশে তামিলরা বসবাস করেন, যারা বহু শতাব্দী আগে ওইসব দেশে চলে গেছেন।"
তিনি বলেন, ভারতে বহু সংখ্যক মানুষ হিন্দিতে কথা বলে এটা সত্যি হতে পারে, "কিন্তু এটাও সমান সত্যি যে হিন্দি বলে না এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।
এলাঙ্গোভান যুক্তি দিয়েছিলেন যে হিন্দি ভাষা ভারতের বিশ্ব পরিচয়ের বাহক হতে পারে না। "উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে অ-হিন্দিভাষী বিভিন্ন ভারতীয় রাজ্য অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং সামাজিক কারণগুলির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত যখন হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি এই সমস্ত মাপকাঠিতে অনেক পিছিয়ে আছে।" এলাঙ্গোভান বলেছিলেন যে হিন্দি একটি আঞ্চলিক ভাষা। "আরএসএস-এর মতাদর্শ অনুসারে সারা দেশে হিন্দি চাপিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে।"
সম্প্রতি ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি এবং অন্যরা হিন্দি ভাষার প্রশ্নে ফুড ডেলিভারি সংস্থা জোমাটোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। যেখানে সংস্থার একজন কাস্টমার কেয়ার এজেন্ট এক গ্রাহককে জানিয়েছিলেন যে, হিন্দি "জাতীয় ভাষা" এবং প্রত্যেকেরই এই ভাষার কিছুটা জানা উচিত।
এই প্রসঙ্গে এক ট্যুইট বার্তায় জোমাটোর নাম উল্লেখ না করে কানিমোঝি জানান, "কিছু কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার শুধুমাত্র নির্বাচিত ভাষায় কাজ করে। কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ভাষায় তাদের গ্রাহকদের সেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহকের হিন্দি বা ইংরেজি জানার প্রয়োজন হয় না।
এই ঘটনার পর অনেকেই জানান তারা জোমাটো অ্যাপ আনইনস্টল করেছেন। আবার কেউ কেউ ডিএমকে-এর প্রতিও আক্রমণ শানিয়ে বলেন যে, এই দলের অনেক নেতা স্কুল চালান, যেখানে হিন্দি শেখানো হয়।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন